মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে হবে 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সকালে জীবনানন্দ দাশ সম্মেলনকক্ষে এই কর্মশালা হয়।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক কর্মশালায় বক্তব্য দেন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আনোয়ার হোসেন।ছবি: প্রথম আলো

প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, দারিদ্র্য, সামাজিক কুসংস্কার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগের ঘাটতি যেমন রয়েছে, তেমনি এ বিষয়ে সীমাহীন উদাসীনতা এবং অসচেতনতা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উন্নত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের একটি বিকল্প, কার্যকর ও বাস্তবমুখী উদ্যোগ খুঁজে বের করতে হবে। বাড়াতে হবে সচেতনতা। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা–বিষয়ক এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনানন্দ দাশ সম্মেলনকক্ষে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

প্রথম আলো বন্ধুসভার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এই কর্মশালার আয়োজন করে। এ কর্মশালা আয়োজনে ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস ও প্রথম আলো ট্রাস্ট সহযোগিতা করে।

কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও সহযোগী অধ্যাপক মো. খোরশেদ আলম, বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি সাইদুল হাসান, প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন, ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালসের সহকারী বিপণন ব্যবস্থাপক এস এম জাহিদুল হক, বন্ধুসভার ঢাকা মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ, বরিশালের তরুণ ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মার্কেটিকের প্রধান নির্বাহী রাকিবুল ইসলাম, প্রথম আলো বন্ধুসভার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি  সামিউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালার শুরুতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রাথমিক ধারণাপত্র তুলে ধরেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার প্রচার সম্পাদক আসাদুল ইসলাম। 

কর্মশালায় ঢাকা সিটি হাসপাতলের সাইকোথেরাপিস্ট–বিশেষজ্ঞ মাহমুদা মুহসিনা বলেন, ‘জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেবল আমাদের চিন্তা, আচরণ বা অনুভূতি নয়; বরং আমরা কীভাবে মানসিক চাপের সঙ্গে মানিয়ে নেব, অন্যদের সঙ্গে মিশব এবং সুস্থ জীবন যাপন করব—সবকিছুতেই এটি প্রভাব বিস্তার করে। 

মাহমুদা মুহসিনা আরও বলেন, মানসিক সুস্থতা যাচাইয়ের তিনটি মাধ্যম রয়েছে। তা হলো—চিন্তা, ইচ্ছাশক্তি ও সমাজে নিজের অবদান সম্পর্কে সচেতন হওয়া। সবার জন্য ওষুধ না, আবেগ আয়ত্তে আনতে হবে। আর নিজেকে ভালোভাবে জানতে হবে, নিজেকে বুঝতে হবে। অন্যকে না, নিজেকে দেখতে হবে, বুঝতে হবে। 

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আনোয়ার হোসেনবলেন, ‘আমরা শারীরিক অসুস্থতাকে যেভাবে গুরুত্ব দিই, সেভাবে মানসিক অসুস্থতাকে পাত্তা দিই না। এমনকি মানসিক স্বাস্থ্য বলে কিছু একটা আছে, সেটিও অনেকে জানেন না, আবার জানলেও খুব একটা গুরুত্ব দেন না। অথচ ব্যক্তির সামগ্রিক কর্মকাণ্ড অবর্তিত হয় মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে। 

মাদক ও ইন্টারনেটে আসক্তি সম্পর্কে আলোচনা করেন বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি  সাইদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘নানা কারণে একজন ব্যক্তি মাদকাসক্ত হতে পারেন। সামাজিক–বিষয়ক দুশ্চিন্তা থেকে ইন্টারনেটে আসক্তি সৃষ্টি হয়। মাদক ও ইন্টারনেটের আসক্তি কর্মস্পৃহা নষ্ট করে। তাই স্ট্রেস কমিয়ে আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে হবে।’

কর্মশালায় অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী স্বর্ণা হালদার বলেন, ‘বন্ধুসভার এই কর্মশালার মধ্য দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে যে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন সে সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। আগে এ সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা ছিল না। তাই কর্মশালাটি আমাদের অনেক উপকারে আসবে।’ 

কর্মশালায় অংশ নেওয়া  রসায়ন বিভাগের পূজা রায়. হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তারিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের এ ধরনের কর্মশালায় আর কখনো অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়নি। আর মানসিক স্বাস্থ্য যে মানুষের জীবনে এতটা গুরুত্বপূর্ণ, একটি বিষয় তা আগে জানা ছিল না। এ ধরনের কর্মশালা অবশ্যই আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন উন্নত করতে ও সুস্থভাবে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।কমর্শালায় ৬৫ শিক্ষার্থী অংশ নেন।