রাজশাহীতে যে ‘মার্কেটে’ শীত বাড়লে পোশাক বিক্রি বেড়ে যায় দ্বিগুণ

শীত মৌসুমে শুক্রবারে ফুটপাতে বসে ‘হলিডে মার্কেট’। এবার শীতের শুরুতেই বেচাকেনা জমজমাট গেছে। শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার এলাকায়ছবি : প্রথম আলো

রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার এলাকায় নিজের জন্য শীতের টুপি আর মেয়ের জন্য একটি শীতের পোশাক কিনলেন সিদ্দিক মিয়া। তিনি ভালোভাবে বেছে ও দেখেশুনে কিনলেন। টুপির দাম ৫০ টাকা আর মেয়ের শীতের পোশাকের দাম ২০০ টাকা।

সিদ্দিক মিয়ার বাড়ি বাঘা উপজেলায়। তিনি বলেন, ‘গত বছর আমি শীতের কাপড় নিয়েছিলাম এই জায়গা থেকেই। এবার আগেই কিনে নিলাম। সামনে শীত পড়বে। দামও কম এখানে। জিনিস দেখে কিনতে পারলে ভালো জিনিসই পাওয়া যায়।’

শীতের এই মৌসুমে রাজশাহী নগরের কুমারপাড়া এলাকা থেকে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত শীতের কাপড়ের বাজার জমে ওঠে। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার এই বাজার বসে। বাজারটি ‘হলিডে মার্কেট’ নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত।

ব্যবসায়ীরা বলেন, রাজশাহীতে শুক্রবার বেশির ভাগ বিপণিবিতান বন্ধ থাকে। বিশেষ করে জামাকাপড়ের বড় দোকানগুলো বন্ধ থাকায় এসব দোকানের বিক্রয়কর্মী ও কর্মচারীরা এক দিন ছুটি কাটানোর বদলে ব্যবসা করেন। দোকানে থাকা বিক্রি না হওয়া পোশাক ও ঢাকা থেকে আনা কম দামি পোশাক নিয়ে ফুটপাতে একদিনের জন্য তাঁরা বেচাবিক্রি করেন। এ জন্য ভোরের দিকে এসে তাঁদের দোকানের জায়গা দখলে নিতে হয়। বেচাবিক্রি চলে রাত ৮টা–৯টা পর্যন্ত। তবে শহরের বাইরে থেকে অনেকে বিক্রির জন্য সাপ্তাহিক এই বাজারে পোশাক নিয়ে আসেন।

রাজশাহীতে দিনে রোদ থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত শীত পড়ে। চলতি নভেম্বরে দুই দিন তাপমাত্রা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীত বাড়লে পোশাক বিক্রি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এখনো ভালো বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, নগরের কুমারপাড়া থেকে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ফুটপাতে হলিডে মার্কেটে শীতের কাপড়ের দোকানগুলোয় উপচে পড়া ভিড়। ফুটপাতের দুই ধারে বসা এই বাজারে ৫০ থেকে ৭০০ টাকায় শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। রাস্তার দুই ধার ছাড়াও সাহেব বাজারের মূল রাস্তাসহ পুরাতন নাটোর রোডের দুই পাশেও শীতের পোশাক নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

সাহেব বাজার ফুটপাতের দক্ষিণ পাশে টুপি ও মেয়েদের শীতের পোশাক বিক্রি করছিলেন মো. আউয়াল। তিনি কয়েক বছর ধরে শীতের সময় পোশাক বিক্রি করেন এখানে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মার্কেটে দোকান আছে। সপ্তাহে এক দিন মার্কেট বন্ধ থাকে। এই সময় আমরা না বসে থেকে কাপড়চোপড় নিয়ে বসি। এটা আমাদের বাড়তি আয়। সব দোকান মিলে সপ্তাহে শুক্রবারে অন্তত ৪০ লাখ টাকা তো বিক্রি হয়ই। এখানে দুই-তিন শ ব্যবসায়ী আছেন।’

যাচাই–বাছাই করে ক্রেতারা কাপড় কিনছেন
ছবি : প্রথম আলো

মো. জুয়েল শিশুদের শীতের কাপড় বিক্রি করছিলেন। রাস্তার পাশে তাঁর দোকান। সেখানে শিশুদের নিয়ে অনেকেই ভিড় করছেন। শিশুদের গায়ে মাপ দিয়ে পোশাক কিনছেন। জুয়েল বলেন, তিনি শুধু শিশুদের শীতের পোশাক বিক্রি করেন। শীতের শুরুতে তাঁর ভালোই বিক্রি হচ্ছে।

শীতের পোশাক বেছে দেখছিলেন পবার হরিয়ান ইউনিয়ন থেকে আসা রোকেয়া বেগম। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে আসার কথা ছিল। কিন্তু আসতে পারিনি। আজ (গতকাল) এসেছি, বাড়ির সব শিশুর জন্য পোশাক কিনব। বড়দের জন্য পছন্দ ও দামে মিললে কিনে নিয়ে যাব।’

এই বাজারে পুরোনো পোশাকের পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন পোশাকের দোকানও রয়েছে। এসব দোকানে ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে জ্যাকেটসহ নানা ধরনের পোশাক রয়েছে। মো. এরশাদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ফুটপাতে থাকা সব কাপড়ই পুরোনো নয়। কিছু পোশাক নতুনও আছে। তাঁর দোকানে নতুন জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়। সকালের দিকে ভালো বিক্রি হয়। তবে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।