আস্তাকুঁড় নেই, বেতুয়া খালে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য 

পৌর কর্তৃপক্ষ ও বাসিন্দারা বেতুয়া খালসহ  শহরের যেখানে–সেখানে বর্জ্য ফেলছেন। 

বর্জ্য ফেলার কারণে ভরাট ও দূষণের শিকার বেতুয়া খাল। সম্প্রতি ভোলার দৌলতখান পৌরসভায়
ছবি: প্রথম আলো

ভোলার দৌলতখান পৌরসভায় বর্জ্য ফেলার নির্ধারিত স্থান ও আস্তাকুঁড় (ডাস্টবিন) নেই। পৌর কর্তৃপক্ষ ও বাসিন্দারা বেতুয়া খালসহ (একসময়ের নদী) শহরের যেখানে–সেখানে বর্জ্য ফেলছেন। এসব বর্জ্যের বড় অংশই পলিথিন। দখল ও দূষণে ভরাট হচ্ছে খাল।

দৌলতখান পৌরসভার (বড় লামছিধলী মৌজা) ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলের উত্তর-দক্ষিণ বরাবর বেতুয়া খাল। এ খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে চারটি সেতু। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পশ্চিম রামরতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি সেতু পার হয়ে দৌলতখান উপজেলা পরিষদ, বন বিভাগসহ উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন ও মেঘনা নদীতে যেতে হয়। খালটি এসব সরকারি কার্যালয়সংলগ্ন পশ্চিম দিকে। বাজারের ব্যবসায়ীরা সেতুর ওপর থেকে খালে বর্জ্য ফেলেন। প্লাস্টিক, ক্লিনিক–হাসপাতালের বর্জ্যও এখানে ফেলা হয়। এ ছাড়া পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও খালে বর্জ্য ফেলেন।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সড়ক ও খালের ওপর ময়লার স্তূপ। বাতাসে পলিথিন ও প্লাস্টিকের প্যাকেট উড়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। মশা–মাছি উড়ছে। লোকজন দুর্গন্ধে নাক টিপে চলাফেরা করছেন। 

বেতুয়া খালটি মেঘনা নদীর ভাঙনে অনেকাংশ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে এ খাল দৌলতখান পৌরসভার ৩, ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের (চর বড় লামছিধলী মৌজা) মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। এর দৈর্ঘ্য ৯০০ মিটার। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাতারখাল মাছঘাটের পাশ দিয়ে খালটি উঠে শহরের মধ্য দিয়ে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের পাশ দিয়ে আবার মেঘনা নদীর সঙ্গে মিশেছে। পাতারখাল মাছঘাট–সংলগ্ন খালের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অনেক আগে একটি জলকপাট (স্লুইসগেট) নির্মাণ করেছিল। একই খালের মাথায় আরেকটি জলকপাট ছিল দক্ষিণে উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নে। কিন্তু সেই জলকপাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা মেঘনায় ভেঙে যাওয়ায় পাউবো ভবানীপুর ইউপি ভবনের কাছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে। এতে খালের এক মুখ আটকে যায়, যদিও বেতুয়া খালের থেকে কয়েকটি শাখা খাল বের হয়ে পশ্চিমে তেঁতুলিয়া নদী থেকে সৃষ্টি হওয়া খালের সঙ্গে মিশেছে।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, খালে এখনো জোয়ার-ভাটা হয়। জেলেরা মাছ ধরেন। খালের তীরে সবজির আবাদ হচ্ছে। কিন্তু খালে ফেলা ময়লা–আবর্জনা ও পলিথিন জোয়ার-ভাটায় মেঘনা নদীতে ছড়িয়ে পড়ছে। 

৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সফিউল্লাহ বলেন, পৌরসভার কর্মীরা নিয়মিত উপজেলা পরিষদ ও বন বিভাগের পশ্চিমে সড়ক ও খালের তীরে বর্জ্য ফেলেন। খালটি নর্দমায় পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধে সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় না। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় এসব বর্জ্য অন্যত্র সরে গিয়েছিল। আবার সেখানে বর্জ্য ফেলা শুরু হয়েছে। 

বেতুয়া খাল ছাড়াও দৌলতখান উপজেলা পরিষদের মধ্যে (৮ নম্বর ওয়ার্ড), পৌরসভা ভবনে যেতে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সামনে (৭ নম্বর ওয়ার্ড), পুকুরপাড়ে, সড়কের দুপাশে, দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে, বাসস্ট্যান্ডে, শহীদ মিনার ও স্মৃতিস্তম্ভের আশপাশে, দৌলতখান মহিলা কলেজের আশপাশের পুকুরে ও বিউটি রোডে বর্জ্য ফেলে ভাগাড় বানিয়ে ফেলা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ভোলা কার্যালয়ের উপপরিচালক তোতা মিঞা বলেন, খাল ও নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা পরিবেশ আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। যাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

দৌলতখান পৌরসভার মেয়র জাকির হোসেন তালুকদার বলেন, তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও পৌরবাসীকে বারবার খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তাঁরা শুনছেন না। সরকারি বরাদ্দ না থাকার কারণে পৌরসভায় আস্তাকুঁড় স্থাপন করতে পারেননি। তারপরও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। সেখানেও গন্ধে লোকজন টিকতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।