ঢাবির প্রাক্তন ছাত্র গড়েছেন ফলের বাগান, আছে বিদেশি ২৫ জাতের আঙুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করে যেখানে অনেকেই চাকরির পেছনে ছোটেন, সেখানে মাসুদুর রহমান (৩৫) নিয়েছেন এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত। ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টাডিজে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করতে চাননি। হতে চেয়েছিলেন শিক্ষক, গবেষণায় সময় দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে কৃষিকে নিজের সাধনার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার খেজমতপুর গ্রামের উচ্চশিক্ষিত এই তরুণ এখন শুধু কৃষক নন, একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। বিদেশি ২৫ জাতের আঙুর চাষ করে যেমন আলোচনায় এসেছেন, তেমনি বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন বারোমাসি ফলের বাগান, যা দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেকেই।
সম্প্রতি মাসুদুরের আঙুরবাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ও সুতা দিয়ে তৈরি বিশেষ মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলে আছে বিভিন্ন ধরনের আঙুর। দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়। সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে কোথাও লম্বাটে, কোথাও গোল আবার কোথাও হালকা রঙিন জাতের আঙুর। মিষ্টি এসব আঙুর এখন পরিপক্ব হয়েছে।
রংপুর শহরের তাজহাট থেকে আসা দর্শনার্থী ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘আমরা ইউটিউবে এ রকম আঙুর দেখি। বাস্তবে দেখব, ভাবিনি। চেখে দেখলাম, খুবই মিষ্টি।’
মাসুদুর রহমানের বাড়ির ছাদে আছে ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ছাদবাগান। সেখানে ১০ প্রজাতির বারোমাসি ফলের গাছ—থাই কমলা, ড্রাগন, জামরুল, মিষ্টি জলপাই, আমড়া, শরিফা, আনারসহ নানান বিদেশি ফল। আর নিচের জমিতে রয়েছে আঙুর। ১০ শতাংশ জমিতে ২৫ জাতের আঙুরের চাষ করেছেন তিনি।
মাসুদুর রহমান বলেন, রাশিয়া, ইতালি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করেছেন আঙুরের চারা। এই বাগানে ৫০টির মতো গাছে এ বছর আঙুর ধরেছে। ইতিমধ্যে তিন মণ আঙুর বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার টাকা। মাচা তৈরি, পরিচর্যা, চারা কেনাসহ সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক না হতে পারলেও মাসুদুর কৃষিক্ষেত্রকেই গবেষণার মাঠে পরিণত করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভয় ছিল বিদেশি আঙুরের স্বাদ নিয়ে। কিন্তু এখন মানুষ খেয়ে মুগ্ধ। আমি চাই, দেশের প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একটি মিষ্টি জাতের আঙুরগাছ থাকুক। যারা চায়, তাদের আমি চারা দিচ্ছি—একেবারে বিনা মূল্যে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, উচ্চশিক্ষিত একজন মানুষ কৃষিকে জীবনের লক্ষ্য করে দেশের মাটিতে বিদেশি ফল চাষ করছেন—এটা শুধু উদাহরণ নয়, অনুপ্রেরণাও। তাঁর বাগানে যে পরিমাণ আঙুর ধরেছে, তা বিদেশি বলে বোঝা যায় না।
মাসুদুর রহমান জানান, প্রতিদিন তাঁর আঙুরের বাগান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ আসেন। ইতিমধ্যে তিন মণ আঙুর ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ৬০ হাজার টাকা। মণ দুয়েক আঙুর দর্শনার্থীদের মধ্যে বিলিয়েছেন। আরও মণ তিনেক আঙুর বাগানে রয়েছে। পাশাপাশি চার একর জমিতে আলু ও কচুর মুখির চাষ করছেন। শুধু কচুর মুখি থেকেই গত বছর প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ করেছেন। বাড়ির পাশের আরও ১৭ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন ১৫ জাতের বিদেশি ফল, সেখানে সাথি ফসল হিসেবে আদা চাষ করে পেয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। কৃষির এই নতুন যাত্রায় যদি আরও কেউ এগিয়ে আসেন, তাহলেই স্বপ্ন সার্থক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।