চ্যাম্পিয়ন ফুটবলার সৌরভি পরিবারের সবচেয়ে আদরের

দেশকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে বাড়ি ফেরার পর মায়ের সঙ্গে সৌরভি আকন্দ প্রীতি। শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

‘আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তাদের মধ্যে সৌরভি সবার ছোট। সে পরিবারের সবার সবচেয়ে আদরের। ছোটবেলা থেকে সৌরভি নানা বায়না করত। জার্সি ও খেলাধুলার নানা উপকরণ কিনে দিয়ে তার বায়না মেটানো হতো। জার্সি পরে সে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা করত। খেলতে খেলতে সৌরভি কখন যে ফুটবলকে আপন করে নিয়েছে, তা বুঝতে পারিনি।’

কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশের সাফজয়ী অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় সৌরভি আকন্দ ওরফে প্রীতির মা মনোয়ারা আক্তার। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে ফেরে সৌরভি। দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে সৌরভীর বাবা-মা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়।

নেপালের কাঠমান্ডুতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে দ্যুতি ছড়িয়েছে সৌরভি আকন্দ। দলকে শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি ৯ গোল করে সে হয়েছে টুর্নামেন্ট-সেরা খেলোয়াড়।

আরও পড়ুন

সৌরভি আকন্দ নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী। প্রাথমিকে পড়ার সময় থেকেই তার ফুটবল নৈপুণ্য সবার নজর কাড়ে। জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের উত্তর জাহাঙ্গীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। ওই বিদ্যালয়ের দলের হয়ে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নেয় সৌরভি। বিদ্যালয়টি টুর্নামেন্টে ভালো করতে না পারলেও সৌরভির খেলা অনেকের নজর কাড়ে। পরে তাকে নান্দাইলের পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। ওই বিদ্যালয় বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম হয়ে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। সৌরভি আকন্দ প্রতিটি পর্যায়ে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়।

সৌরভির বড় ভাই জহিরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, ‘বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সারা দেশ থেকে ৮৪ জন কিশোরীকে ডেকে যশোরে নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। তাদের মধ্যে সৌরভিও ছিল। আমার বিশ্বাস ছিল, সৌরভি একদিন নামকরা ফুটবলার হবে। ২০২২ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল দলের হয়ে ভুটানের সঙ্গে দুটি খেলায় সে তিনটি হ্যাটট্রিক করেছে। তবে ওই টুর্নামেন্টে নেপালের সঙ্গে গোল করতে না পারায় তার মন খুবই খারাপ হয়েছিল।’

খেলায় মেয়ের এই সাফল্যে যেন আনন্দ ধরে না বাবা-মায়ের। পেশায় কৃষিজীবী বাবা আবুল কালাম আকন্দ বলেন, ‘আমার চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সৌরভি। সে গ্রামের ছোট–বড় সবার কাছে প্রীতি নামে পরিচিত। ছোটবেলা থেকে তার যতটা না পড়ালেখার প্রতি ঝোঁক ছিল, এর চেয়ে বেশি ছিল খেলাধুলার প্রতি। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, সাইকেল চালনা এমনকি বাঁশ দিয়ে স্টিক বানিয়ে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে হকি খেলত সে।’

গ্রামের মানুষও সৌরভির নৈপুণ্যে অত্যন্ত খুশি। তার ভাই জহিরুল জানান, তাঁদের বাড়িকে মানুষ এখন আকন্দ বাড়ির পাশাপাশি ফুটবলার সৌরভির বাড়ি নামে ডাকে। খেলার দিন সৌরভিদের বাড়ির উঠানে টেলিভিশনে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। সৌরভির পায়ে বল গেলে হইহুল্লোড় শুরু হয়।

শাহ আলম নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়ায় থাকি। ছুটি পেয়ে সম্প্রতি গ্রামে এসেছি। সৌরভি আকন্দ বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলছে। গোলের পর গোল দিচ্ছে। সে আমার গ্রামের মেয়ে। প্রবাসী বন্ধুদের সঙ্গে সৌরভির সাফল্যের কথা বলে আমি গর্ববোধ করি।’

আরও পড়ুন