এক হাজার গরু–ছাগল আক্রান্ত, ১৭ মৃত্যু 

কৃষক ও খামারিরা জানিয়েছেন, চিকিৎসা দেওয়ার পরও গরু সুস্থ না হওয়া দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। 

সাতক্ষীরায় সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বসন্তের মতো একধরনের চর্মরোগে প্রায় এক হাজার গরু ও ছাগল আক্রান্ত হয়েছে। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, বসন্ত নয়, এই রোগের নাম লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। গত ১০দিনে এই রোগে সদর উপজেলার ঘোনা ও বাঁশদাহ ইউনিয়নের ১৫টি গরু ও ২টি ছাগল মারা গেছে। কৃষক ও খামারিরা জানিয়েছেন, চিকিৎসা দেওয়ার পরও গরু সুস্থ না হওয়া দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। 

তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, এলএসডি একধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। গবাদিপশু আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসা দিতে পারলে মৃত্যুর শঙ্কা কম। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়নের ঘোনা, বাঁশদাহ, ঝাউডাঙ্গাসহ অন্তত ২০টি গ্রামে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। কৃষকেরা বলছেন, গরুর শরীরে গুটি গুটি উঠে তা ঘায়ে পরিণত হচ্ছে ও শরীরের চামড়া ফুলে উঠছে। যা দেখতে অনেকটা বসন্ত রোগের মতো। গরু ও ছাগল উভয়ই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। 

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তুজলপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, প্রথমে গরুর গায়ে ছোট ছোট গুটি দেখা দিচ্ছে। দিন পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গায়ের গুটি বড় হচ্ছে। পরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। গরুর শরীরের তাপমাত্রাও অনেক বেশি। পা ফুলে যাচ্ছে। গরু খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। 

বিহারিনগর গ্রামের নাজমুল হক বলেন, গরুর চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই তাঁর চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। তারপরও গরু সুস্থ হচ্ছে না। 

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ দিনে ছনকা গ্রামের প্রতিম ঘোষের একটি, একই গ্রামের হাফিজুর রহমান সরদারের তিনটি, আল মামুনের দুইটি, আফসার আলীর একটি, বাবলুর রহমানের দুইটি, রবি সরদারের একটি, আফসার আলী মোল্যার একটি, ওমর আলীর একটি, ঘোনা গ্রামের রফিকুল ইসলামের একটি, বাহার আলীর একটি গরু ও একটি ছাগল, মুছানুরের একটি ছাগল ও গাজীপুর গ্রামের অজিত পালের একটি গরু মারা গেছে। এ ছাড়া বাঁশদাহ ইউনিয়নের হাওয়ালখালি গ্রামে মুজিবর রহমানের একটি বড় গরু মারা গেছে। 

 সদর উপজেলার ঘোনা গ্রামের অজিত পাল বলেন, এলএসডি রোগে তাঁর একটি গরু ও ছাগল মারা গেছে। স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিলেও ভালো ফল পাওয়া যায়নি। এলাকায় প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে কোনো কর্মী কিংবা কর্মকর্তাও সরেজমিনে এসে কোনো ধরনের পরামর্শ দেয়নি। 

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুর রউফ বলেন, এলএসডি ভাইরাসজনিত রোগ। গবাদিপশু এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসা দিতে পারলে মারা যাওয়ার সম্ভবনা কম। তবে আক্রান্ত পশুর দেরিতে চিকিৎসা শুরু ও হাইব্রিডজাতীয় গবাদিপশু আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে সীমান্ত এলাকায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা কঠিন। এ পর্যন্ত কয়টি পশু মারা গেছে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কারও কাছে নেই। তবে রোগটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু কিছু এলাকায় ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে।