সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের মঞ্চের ঠিক পাশেই বিলবোর্ডের মতো করে বাঁশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে সাঁটানো হয়েছে বিএনপির প্রয়াত নেতা এম সাইফুর রহমান ও ‘নিখোঁজ’ নেতা এম ইলিয়াস আলীর ছবি। সবাই দল বেঁধে এখানে এসে মুঠোফোনে ছবি আর সেলফি তুলছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এ দৃশ্য দেখা গেছে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির সমাবেশস্থলে।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলেন, সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে ‘তারকা’ হিসেবে খ্যাত এই দুই নেতাকে এভাবে গণসমাবেশে স্মরণ করার বিষয়টি প্রশংসনীয়। বিএনপি যে তাঁদের মতো নেতার অবদান ভুলে যায়নি, এটা তারই প্রমাণ।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, একটা সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ছিলেন সিলেট বিএনপির একক নেতা। এরপর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর উত্থান হলে দুই ধারায় সক্রিয় ছিল সিলেট বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো। সাইফুর রহমানের মৃত্যু ও ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর দল আর ঐক্যবদ্ধ হয়নি। উল্টো বিভক্তি বেড়েছে, বলয়ের ভেতরে তৈরি হয়েছে উপবলয়। এ অবস্থায় এই দুই নেতার ছবি সাঁটানোর বিষয়টি ঐক্য আর বন্ধনের বিষয়টিই সুসংহত করেছে।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুর রহমান ও ইলিয়াস আলীর অবদান সিলেটের বিএনপি কখনো ভুলতে পারবে না। তাঁদের মতো মহান দুই নেতা এই অঞ্চলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের জীবন ও আদর্শ তরুণ প্রজন্মের জাতীয়তাবাদী চেতনা লালনকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এবং দুই মহান নেতাকে স্মরণে রাখতেই ছবি সাঁটানো হয়েছে।
অস্থায়ীভাবে সাঁটানো এম সাইফুর রহমানের ছবির ওপরে লেখা ‘তোমার শূন্যতা অপূরণীয়’ বাক্যটি দেখিয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বিএনপি-সমর্থক আনহার উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাড়ি মৌলভীবাজার। প্রয়াত নেতা সাইফুর রহমানের বাড়িও মৌলভীবাজার। জীবদ্দশায় সিলেটজুড়ে তিনি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। মানুষের স্মৃতিতে তিনি এখনো উজ্জ্বল। বিএনপি সাইফুর রহমান ও ইলিয়াস আলীকে এভাবে মনে রাখায় আমরা তৃণমূলের কর্মীরা খুবই উচ্ছ্বসিত। এ দুটি ছবি ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আমার কাছে মনে হচ্ছে।’
সিলেট বিএনপির দুজন নেতা বলেন, সাইফুর রহমান ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর একটি সড়ক দুর্ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মারা যান। অন্যদিকে ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে ‘নিখোঁজ’ হন। এর পর থেকে সিলেট বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে এই দুই নেতা সশরীর না থেকে সব সময় দৃশ্যমান থাকেন। অনেক নেতা-কর্মী তাঁদের পোস্টার, ফেস্টুনে এ দুই নেতার ছবি যুক্ত করে প্রচার-প্রচারণা চালান।
বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে বেশ কয়েকজন নেতা এম সাইফুর রহমান ও এম ইলিয়াস আলীর ছবি তাঁদের পোস্টার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ব্যবহার করেছেন। তাঁদের একজন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইফুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলাম আমি। বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও দলমত–নির্বিশেষে তিনি উন্নয়ন করেছেন। অন্যদিকে ইলিয়াস আলীও সিলেট বিএনপির একজন তারকা নেতা। দুই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিলবোর্ড, ফেস্টুনসহ আমার যাবতীয় প্রচারণায় তাঁদের ছবি ঠাঁই দিয়েছি।’