২০১৮ সালে পদ্মা নদীর ভাঙনে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল হাসপাতাল ভবন বিলীন হয়ে যায়। তখন থমকে যায় চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম, তা গতিশীল করতে সরকার নতুন আরেকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালে উপজেলা সদরে এর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। তখন কাজের শুরুতে ভবন নির্মাণের পাইলিংয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তখন কাজটি বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর আর তিনজন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে কেদারপুর ইউনিয়নের মুলফৎগঞ্জ বাজারে অবস্থিত। ১৯৬৮ সালে এটি স্থাপন করা হয়। তখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে ছিল পদ্মা নদী। পদ্মার ভাঙনের কারণে হাসপাতালের কাছে চলে আসে নদী। ২০১৮ সালে নদীভাঙনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল হাসপাতাল ভবন বিলীন হয়ে যায়। ঝুঁকিতে পড়ে কমপ্লেক্সের আরও ১২টি ভবন। তখন স্বাস্থ্যসেবার কাজ কিছুদিন বন্ধ রাখা হয়। এরপর তা সীমিত করে চালু করা হয়। এরপর উপজেলা সদরে নতুন করে আরেকটি ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করার উদ্যোগ নেন উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারিপত্র (ডিও লেটার) দেন। এরপর নড়িয়া উপজেলা সদরে নতুন একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।
ঠিকাদার বাতিল হয় যেভাবে
৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮টি ভবন, গ্যারেজ ও ওয়্যারহাউস নির্মাণের জন্য ২০২০ সালে ৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ২০২০ সালের জুনে এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়। ওই বছর নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প এলাকায় বালু ভরাটের কাজ করে। হাসপাতালের ৪ তলা ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিং শুরু করা হয়। ওই ভবনে ৪৫ ফুট দৈর্ঘ্য ২৩৯টি পাইল বসানোর কাজ শুরু করা হয়। সেখানে ৯৫টি পাইল বসানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই ৯৫টি পাইল ৪৫ ফুটের পরিবর্তে ২২-২৩ ফুট করে স্থাপন করা হয়েছে।
এমন অভিযোগ পেয়ে ২০২১ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নকশা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেন। তখন বিশেষজ্ঞরা ওই পাইল পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, পাইলগুলো অর্ধেক করে স্থাপন করা হয়েছে। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলে। এতে তিন প্রকৌশলীর জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। গত বছরের ২৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে প্রকল্পটির কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির জামানত হিসেবে রাখা ১০ শতাংশ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়।