ফসলি জমি ফাঁকা পড়ে থাকায় মন কেঁদে ওঠে ফজলুলের

রংপুরের বদরগঞ্জে সেচ দিতে বাধা দেওয়ায় দেড় একর জমিতে বোরো আবাদ করতে পারেননি ফজলুল হক। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

কৃষক ফজলুল হক দেড় একর জমিতে প্রতিবছর ১৫০ থেকে ১৬০ মণ  বোরো ধান পান। ওই ধান বিক্রি করে তিনি সংসারের অনেক খরচ মেটান। কিন্তু এবার পানি সেচে বাধা দেওয়ায় সেই জমিতে ধান চাষ করতে পারেননি। ইউএনও এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। একই কারণে আসন্ন আমন মৌসুমেও জমি অনাবাদি পড়ে থাকার আশঙ্কায় আছেন তিনি।

ফজলুল হকের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ফকিরপাড়া গ্রামে।

ইউএনওর কার্যালয়ে দেওয়া ভুক্তভোগী ওই কৃষকের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পরাজিত ইউপি সদস্যপ্রার্থী রেজাউল করিম ওই জমিতে পানি সেচে বাধা দিচ্ছেন। রেজাউলের জমির নিচ দিয়ে রয়েছে গভীর নলকূপের পানি সেচের প্লাস্টিকের পাইপ। মাটি খুঁড়ে এই পাইপ তিনি বারবার ভেঙে নষ্ট করে পানি সেচে বাধা দেওয়ায় ওই দেড় একর জমিতে ফজলুল হক বোরো লাগাতে পারেননি।

ফজলুল হক জানান, গ্রামের মাটিয়াল পাতারে তাঁর আট একর আবাদি জমির মধ্যে দেড় একর রয়েছে পরাজিত ইউপি সদস্যপ্রার্থী রেজাউল করিমের জমির পাশে। সেখানে স্থাপিত একটি গভীর নলকূপ থেকে সেচ নিয়ে তিনি সব জমি চাষ করেন। ওই নলকূপ স্থানীয় কুতুবপুর ফকিরপাড়া সমবায় সমিতির অধীন।

কৃষক ফজলুল হক (৭২) আক্ষেপ করে বলেন, ‘চলতি বোরো মৌসুমে ওই জমি থেকে ১৫০ মণ ধান না পাওয়ায় এবার সংসার চালাতে ভীষণ কষ্ট হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন, “এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে।” অথচ পানি সেচে বাধা দেওয়ার ব্যাপারে ইউএনও এবং কৃষি অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলাম, আকুতি মিনতি করলাম কোনো কাজ হলো না। চারপাশে বোরো ধান ফললেও পানির অভাবে মধ্যখানে শুধু আমার দেড় একর জমি অনাবাদি রয়েছে। ফাঁকা পড়ে থাকা জমিটা দেখলেই মনটা কেঁদে ওঠে।’

রংপুরের বদরগঞ্জে প্লাস্টিকের পাইপ ভেঙে দেওয়ায় জমিতে সেচ দিতে পারছেন না ফজলুল হক
ছবি: প্রথম আলো

ওই গভীর নলকূপ পরিচালনা কমিটির পরিচালক মঞ্জুরুল হাসান বলেন, পরাজিত ইউপি সদস্যপ্রার্থী রেজাউল করিমের জমির নিচ দিয়ে গভীর নলকূপের সেচপাইপ রয়েছে। এই পাইপের সাহায্যে কৃষক ফজলুল হক দেড় একর জমিতে পানি সেচ নিয়ে ধান চাষ করতেন। কিন্তু নির্বাচনে ভোট না দেওয়াকে কেন্দ্র করে রেজাউল করিম ক্ষুব্ধ হয়ে চলতি বোরো মৌসুমে ওই পানির পাইপ বারবার ভেঙে কৃষক ফজলুল হকের দেড় একর জমিতে পানি সেচ দিতে বাধা দিয়েছেন। এ কারণে ওই জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে।

মঞ্জুরুল হাসান অভিযোগ করেন, কৃষিকাজে পানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা অনুযায়ী, গভীর কিংবা অগভীর নলকূপের ৫০০ মিটারের মধ্যে নতুন সেচপাম্প বসানো অবৈধ। কিন্তু পরাজিত ইউপি সদস্যপ্রার্থী রেজাউল করিম আত্মীয়তার সুবাদে ক্ষমতাসীন দলের এক জনপ্রতিনিধির যোগসাজশে গভীর নলকূপের ২০০ গজের মধ্যে ইতিমধ্যে দুটি অগভীর সেচপাম্প স্থাপন করেছেন।

অভিযুক্ত রেজাউল করিম বলেন, ‘গভীর নলকূপের সেচপাইপ রাতের অন্ধকারে কে ভেঙেছে জানি না। আমি পানি সেচ দিতে কাউকে বাধা দিইনি।’

বদলি হয়ে যাওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ বলেন, ‘বোরো মৌসুমের শুরুতে কৃষক ফজলুল হকের লিখিত অভিযোগ পেয়ে ওই সময়ে আমি নিজেই ওই এলাকা পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছিলাম। পরে পরাজিত ইউপি ইউপি সদস্যপ্রার্থী রেজাউল করিমকে গভীর নলকূপের ক্ষতিগ্রস্ত পাইপ মেরামত করে দেওয়াসহ পানি সেচে বাধা দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর কী হয়েছে তা জানি না। তবে জমি অনাবাদি পড়ে থাকাটা চরম ক্ষতিকর।’

সদ্য বদলি হওয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মো. জোবাইদুর রহমান বলেন, ‘পানি সেচ দিতে না পারায় জমি অনাবাদি থাকার বিষয়টি জানি। তবে চেষ্টা করেও আমরা তা সামাধান করতে পারিনি।’

ইউএনও নাজির হোসেন বলেন, ‘সেচের অভাবে জমি অনাবাদি থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে নতুন করে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’