গাইবান্ধা
নড়বড়ে সাঁকোয় পারাপার
দীর্ঘদিন দাবি জানিয়েও এখানে সেতু হয়নি। স্বেচ্ছাশ্রমে নদের ওপর কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেন এলাকাবাসী।
এপারে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাঘোয়া ইউনিয়ন। ওপারে গিদারি ইউনিয়ন। মাঝখানে প্রবাহিত মানস নদ। দীর্ঘদিন দাবি জানিয়েও এখানে সেতু হয়নি। এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে নদের ওপর কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেন। দুই ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা সাঁকোটি। এটি এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে লোকজনকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ঘাঘোয়া ও গিদারি ইউনিয়নের মধ্যে বর্ষার সময় নৌকায় এবং শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে যোগাযোগ চালু ছিল। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি দুই ইউনিয়নের লোকজন নদের ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সাঁকো নির্মাণ শুরু করেন। কেউ টাকা, কেউ বাঁশ, কেউ গাছ, কাঠ, রশি দিয়ে সহায়তা করেন। এতে খরচ হয় মোট প্রায় তিন লাখ টাকা।
২০১৪ সালের মাঝামাঝি সাঁকো নির্মাণকাজ শেষ হয়। তখন থেকে সাঁকোর ওপর দিয়ে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা-ভ্যান চলাচল করত। গত বছর বর্ষায় সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এরপর বিগত প্রায় ১০ বছরে সাঁকোটি আর মেরামত করা হয়নি। ফলে সাঁকোর অনেক খুঁটির নিচের অংশ পানিতে নষ্ট হয়েছে। কয়েকজন একসঙ্গে উঠলে সাঁকোটি দোল খায়। ঝুঁকি এড়াতে সাঁকোর ওপর দিয়ে রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা চলাচল না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত মানস নদ। সাঁকোর পশ্চিম প্রান্তে ঘাঘোয়া ইউনিয়নের কাটিহারা গ্রাম। গাইবান্ধা শহর থেকে কাটিহারার দূরত্ব সাত কিলোমিটার। সাঁকোর অন্য প্রান্তে গিদারি ইউনিয়নের হিন্দুপাড়া। গত শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, অনেকে হেঁটে সাঁকো পার হচ্ছেন। অনেকে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মোটরসাইকেল পার করা হচ্ছে ঠেলে। রিকশা-ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় লোকজন মালপত্র মাথায় নিয়ে যাচ্ছেন।
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বর্ষাকালে নদীর স্রোতে কাঠের খুঁটি নড়বড়ে হয়ে যায়। তখন থেকে কয়েকজন উঠলেই সাঁকোটি দোল খাচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সবাই ধীরগতিতে পার হন। বিশেষত রাতে পারাপারে সমস্যা হয় বেশি।
এদিকে সাঁকোর এক পাশে পাকা সড়ক। অন্য পাশে কাঁচা সড়ক রয়েছে। সাঁকো ছাড়া এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়নে যাতায়াতের কোনো উপায় নেই। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অটোরিকশা-ভ্যান পারাপারের সুযোগ নেই। ফলে দুই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
কাটিহারা গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদ সরকার (৫৫) বলেন, এখানে সেতু নির্মাণে অসংখ্যবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হতে হচ্ছে।
একই গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম (৪৫) নিজের ভাষায় বলেন, ‘ভোটের আগোত সগলে বিরিজ বানে দিব্যার চায়া ভোটকোনা নেয়। জিতলে তামারঘরে দেকা পাওয়ান যায় না।’
উত্তর ঘাঘোয়া গ্রামের মিজানুর রহমান (৬৫) বললেন, ‘একন্যা বিরিজের জন্নে হামরা চেরমেনোক কচি। কিনতো বিরিজ হয় নাই। তাই হামরা নিজেরাই ট্যাকা দিয়া, কামলা দিয়া সাকোখ্যান বানাচি। সেখেন নসটো হবার ধরচে।’
দুটি ইউনিয়নের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিদিন ৩০০-৪০০ শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হচ্ছে। বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে কাটিহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেপারীপাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ধুতিচোড়া গ্রামের স্কুলছাত্র আবুল হাসান বলেন, সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পারাপার হতে হচ্ছে। কারণ, জেলা শহরে যেতে বিকল্প পথ নেই। একই এলাকার আরেক স্কুলছাত্র রফিকুল ইসলাম জানায়, শিশুশিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। এখানে সেতু অবশ্যই দরকার।
মণ্ডলপাড়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক ময়নুল ইসলাম বলেন, শিশুশিক্ষার্থীদের জন্য এ ধরনের নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে নদ পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ। অভিভাবকেরা শিশুশিক্ষার্থীদের সাঁকো পারাপার করে দেন। এখন সেতু নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই।
ঘাঘোয়া ইউপির চেয়ারম্যান আমিনুর জামান ও গিদারি ইউপি চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ জানান, এখানে সেতু নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সেতু নির্মাণে ব্যবস্থা নিতে এলজিইডিকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, কাটিহারা এলাকায় মানস নদের ওপর সেতু নির্মাণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে।