বরিশালে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ডেঙ্গু রোগী, ক্রমেই পরিস্থিতির অবনতি

মশারি টাঙিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিভাগে গতকাল বুধবার সকাল ছয়টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৪০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের মধ্যে যা এক দিনে সর্বোচ্চ। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ১৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

আজ বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬১০ জন রোগী। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

২৪ ঘণ্টায় বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৮ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৫, বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ৩৭, পিরোজপুরে ৪৭, বরগুনায় ৩২, ভোলায় ২৪ ও ঝালকাঠিতে ৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আজ নতুন ও পুরোনো রোগী মিলিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৬০ জন রোগী। আর বিভাগের সব হাসপাতাল মিলিয়ে ভর্তি আছেন ৬১০ জন ডেঙ্গু রোগী।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বরিশাল বিভাগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৫০৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন ৪৩৩ জন। চলতি জুলাই মাসের ১৯ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৪ জন। চলতি জুলাইয়ের ১৯ দিনেই বিভাগে মোট ডেঙ্গু রোগীর ৮২ দশমিক ৭৩ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছেন।

বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত তিনজন মারা গেছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ জোছনা আক্তার (৩৫) নামের এক নারী ১৭ জুলাই শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এর আগে ২৮ জুন নাসিমা বেগম (৩৫) নামের পাথরঘাটার এক নারীর একই হাসপাতালে মৃত্যু হয়। এর আগে এপ্রিলে আরেক রোগী মারা যান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে প্রথম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই বছর বিভাগে সাড়ে সাত হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল ১৪ জনের। এর আগে বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ইতিহাস নেই। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দুই বছর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত বছর বিভাগে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব পুনরায় মারাত্মক রূপ নিয়েছিল। গত বছর বিভাগে তিন হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মারা গিয়েছিলেন ১১ জন।

স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরিশালে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার পর প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগস্ট–সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এ জন্য এখন থেকেই সমন্বিত প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শুরুতে বেশির ভাগেরই বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের ইতিহাস থাকলেও এখন স্থানীয়ভাবে অনেক রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় তুলনামূলক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি হওয়ায় ওই উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি দল পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেখান থেকে সংগৃহীত নমুনায় এডিসের লার্ভা শনাক্ত করেছেন কীটতত্ত্ববিদেরা। এখন দলটি পটুয়াখালীতে নমুনা পরীক্ষা করবে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীরই ভ্রমণের ইতিহাস আছে। তবে এখন অনেক রোগী আসছেন, যাঁদের ভ্রমণের ইতিহাস নেই। এটা অশনিসংকেত। পিরোজপুরের নেছারাবাদে এডিসের লার্ভা শনাক্ত হয়েছে। এখন পটুয়াখালীতে ওই দল নমুনা সংগ্রহ করবে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। এ ব্যাপারে চিকিৎসাব্যবস্থার কোনো ঘাটতি নেই বলে তিনি দাবি করেন।