শরীয়তপুরে দুর্গাপূজায় অন্যতম আকর্ষণ ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা

শরীয়তপুরের জেলা কেন্দ্রীয় (শ্রীশ্রী শ্যামসুন্দর জিউ) মন্দিরে দুর্গাপূজায় ধুনুচি নাচে মেতে উঠেছেন প্রতিযোগীরা। গতকাল বুধবার রাতে তোলাছবি: প্রথম আলো

দুর্গাপূজার মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধ্যায় ঢাকের তালে, কাঁসার ঝংকারে ভক্তরা হাতে তুলে নেন নারকেলের ছোবড়া ও ধূপকাঠের সুগন্ধি ধুনুচি। জ্বলন্ত ধূপে ভরা ধুনুচি পাত্র দোলাতে দোলাতে বিশেষ ভঙ্গিতে নাচেন তাঁরা। একে ধুনুচি নাচ বললেও অনেকে আরতি প্রতিযোগিতা নামেও চেনেন।

শরীয়তপুর শহরের পালং বাজারের পাশে জেলার কেন্দ্রীয় মন্দির শ্রীশ্রী শ্যামসুন্দর জিউ (পালং হরিসভা) মন্দিরে দুর্গাপূজায় ধুনুচি নাচের আয়োজন চলে আসছে ১০২ বছর ধরে। চলতি বছরও এই আয়োজন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে। দুর্গাপূজার শেষাংশে দেবীর আরাধনায় যে উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়, তার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই ধুনুচি নাচ।

মন্দিরটির পরিচালনা কমিটি জানায়, ১৩৩০ বঙ্গাব্দ স্থানীয় বণিক পরিবার মন্দিরটি নির্মাণ করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মন্দিরটিতে প্রতিবছর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপূজায় নানা আয়োজনের পাশাপাশি ধুনুচি নাচ অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধিপূজার শেষে সন্ধ্যা থেকে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে স্থানীয় শিল্পীরা বিভিন্ন ভক্তিমূলক ও ধর্মীয় গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে ধুনুচি নাচের আয়োজন। ধুনুচি নাচে অংশগ্রহণকারীদের থেকে মধ্য থেকে বিজয়ী নির্বাচন তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

২৫ বছর ধরে শরীয়তপুর শ্রীশ্রী শ্যামসুন্দর জিউ মন্দিরের বিভিন্ন পূজা-অর্চনায় বাদ্যযন্ত্র বাজান শিল্পী স্বপন দাস (৬০) ও তাঁর দল। তাঁর দলের ঢাক-ঢোল, বাঁশি আর কাঁসার ঝংকারের সঙ্গে ধুনুচি হাতে ভক্তরা মেতে ওঠেন প্রতিযোগিতায়। স্বপন দাস প্রথম আলোকে বলেন, ঢাক-বাঁশির সুর ও তালে ভক্তরা নৃত্য করেন। এটাতে তিনি বেশ আনন্দ পান। দুর্গা পূজায় হাজারো মানুষ আসেন, তারা বাজনা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন তা বোজা যায়। ভক্তদের দেওয়া অনুপ্রেরণায় ৫০ বছর ধরে এই পেশায় আছেন বলে দাবি তাঁর।

ধুনুচি হাতে মেতে ওঠে শিশুরাও
ছবি: প্রথম আলো

ধুনুচি নাচের শিল্পী হেমন্ত দাস বলেন, ‘কিশোর বয়সে অপেক্ষায় থাকতাম কখন দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে, আর কখন ধুনুচি নাচে অংশ নেব। এই নাচে অংশ নিয়ে নিজে আনন্দ পাই, মন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের আনন্দ দিই। দিন শেষে এমন আয়োজন আমাদের সবাইকে দুর্গা পূজায় বাড়তি আনন্দ দেয়।’

শরীয়তপুর শহরের পালং এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক পলাশ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুর্গা পূজা দেখতে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরি। সর্বত্রই আলোকসজ্জা আর অপসংস্কৃতির ছড়াছড়ি। কিন্তু সনাতনীদের আদি সংস্কৃতি খুব কম মন্দিরেই লক্ষ্য করি। এখন আর সব মন্দিরে ধুনচি নাচের আয়োজনটি আগের মতো সাড়ম্বড়ে হয় না। জেলা কেন্দ্রীয় মন্দিরে এ আয়োজনটি করার কারণে পরিবার নিয়ে এখানে সময় টাকাই, আনন্দ করি।’

জেলা কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতি মুকুল চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, আমরা ১০২ বছর ধরেই শাস্ত্রমতে ও শতভাগ ধর্মীয় বিধান মেনে পূজা উদ্‌যাপন করছি। পূজার সময় নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ধুনুচি নাচের আয়োজন করে আসছি। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই আয়োজন হয়ে থাকে।