রোদ-খরতাপে শোভা বাড়াচ্ছে রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া
ছবি: প্রথম আলো

এখন গ্রীষ্মকাল। কখনো কালবৈশাখীর রুদ্র তাণ্ডব ও কখনো কাঠফাটা রোদের খরতাপ। সবুজ গাছগাছালির মধ্যে আগুনরাঙা কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিতে এনেছে ভিন্ন আমেজ। রঙিন ফুলের এ সমারোহ সড়কে চলাচলকারী সবাইকে করছে মুগ্ধ।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বাজার রেলস্টেশন, বাজার প্রধান সড়ক ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সড়কের দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া বাড়তি শোভা ছড়াচ্ছে। স্থানীয় মানুষেরা বলেন, প্রায় ১৩ বছর আগে গোয়ালন্দ-দৌলতদিয়া ঘাটগামী রেললাইনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজার প্রধান সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়াগাছ রোপণ করে একজ জাগরণে নামের একটি সামাজিক সংগঠন। সংগঠনটি প্রাণী ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করে। সংগঠনের সদস্যরাই গাছের যত্ন নেন। কয়েক বছর আগে গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। তখন সংগঠনের সদস্যরা রেললাইনে শুয়ে এর প্রতিবাদ করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় অনেকে। পরে সবার অনুরোধে রক্ষা পায় এসব গাছ।

রেলস্টেশন এলাকায় দেখা যায়, রেললাইন ঘেঁষে রোপিত কৃষ্ণচূড়াগাছে প্রচুর ফুল ফুটেছে। মানুষেরা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। গোয়ালন্দ বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি ছিদ্দিক মিয়া বলেন, ‘আগে রাস্তা দিয়ে দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদে চলাচলে কষ্ট হতো। এখন বড় হওয়ায় গাছের নিচে বসতে পারছি, বিকেলে বসে আড্ডা দিচ্ছি। হাটের দিন অনেকে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেন।’  

একজের আহ্বায়ক সুজন সারোয়ার বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে প্রায় ১৩ বছর আগে প্রায় ১ হাজার কৃষ্ণচূড়ার চারা রোপণ করেন তাঁরা। এর মধ্যে রেলস্টেশনের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। তবে কিছু গাছ মরে গেছে। আগামী জুন-জুলাইয়ে আরও গাছ রোপণের পরিকল্পনা আছে।

এদিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কজুড়ে কৃষ্ণচূড়া সৌন্দর্য বিলাচ্ছে। ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলগামী শত শত যানবাহনের যাত্রী ও পথচারী এতে বিমোহিত। অনেকে যাত্রাবিরতি দিয়ে ছবি তুলছেন, কেউ রোদে বিশ্রাম নিচ্ছেন। অনেকে পরিবারসহ ঘুরতেও আসছেন।

রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়ার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা-যমুনা বহুমুখী বনায়ন সমিতির সভাপতি আবদুল আহাদ বলেন, উপজেলা বন বিভাগের আর্থিক সহযোগিতায় উপকারভোগী সদস্যদের সমন্বয়ে প্রায় ৯ বছর আগে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কে দুই হাজার কৃষ্ণচূড়াগাছ রোপণ করা হয়। আগামী বর্ষা মৌসুমে প্রায় পাঁচ হাজার গাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা রয়েছে।    

ঢাকাগামী দূরপাল্লার পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরে এসব গাছে ফুল ফোটায় গোটা মহাসড়কজুড়ে এক নতুন আমেজ এসেছে। তাঁরাও কাজের ফাঁকে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেন, ছবি তোলেন।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, তাপপ্রবাহ আর গরমের মধ্যে অনেকের দুর্ভোগ খানিকটা লাঘব হয় গাছের ছায়ায় বসলে। অনেক যাত্রী গাড়ি থেকে নেমে ছবি তোলেন। সুযোগ পেলে তাঁরা ছবি তোলেন।