চালের দাম দুই টাকা কমাতে মন্ত্রীর আহ্বান, আশ্বাস দিলেন মিলমালিকেরা

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণে অংশীজনদের সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর মতবিনিময় সভা। বৃহস্পতিবার রাতে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরে মিলমালিকদের উদ্দেশে চালের দাম কেজিতে দুই টাকা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। মিলমালিকেরা সরাসরি ওয়াদা না করলেও কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন। এরপরও ধান-চালের বাজারে খাদ্য বিভাগের চলমান ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রী। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে জেলার মিলমালিক, চাল ব্যবসায়ী, কৃষি বিভাগ, খাদ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘মিল গেটে চালের দাম কিছুটা কমেছে। কয়েক দিন আগে চালের যে উচ্চমূল্য ছিল, চলমান অভিযানের ফলে বর্তমানে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’ এ সময় খুচরা বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও খাদ্য বিভাগের বিশেষ নজরদারি অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।

খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, অভিযান কিংবা আইন প্রয়োগ করে চালের দাম কমাতে আমরাও চাই না। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে ঘোষণা, তা বাস্তবায়ন করতে সবাইকে একত্র হয়ে সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ১ মার্চ থেকে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। প্রায় ৫০ লাখ পরিবার এ কর্মসূচির আওতায় এলে চালের দাম আরও কমে আসবে।

মিলমালিকদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব মিলমালিক সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও সংগ্রহ অভিযানে চাল দেননি, বিভিন্ন মেয়াদে তাঁদের শাস্তি হয়েছিল। ইতিমধ্যে তাঁদের শাস্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাঁরা আবার লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করলে তা ফেরত পাবেন। তবে অবশ্যই পরবর্তী সময়ে একই ভুল করতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় নতুন নীতিমালা প্রণয়নের চিন্তা করছে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মিলমালিককে চালের বস্তার গায়ে দর, জাত ও উৎপাদনের তারিখ লিখতে হবে। এতে ব্যবসায়ী ও মিলমালিকদের পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করার কোনো উপায় থাকবে না। তবে ফুড গ্রেড নিবন্ধন ছাড়া কেউ ধান-চাল মজুত করতে পারবেন না। সরকার এটি কঠোরভাবে নজরদারি করছে।

অ্যারোমেটিক চালের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘সব প্রকার অ্যারোমেটিক চাল রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। রোজায় সেই চালের প্রয়োজন পড়বে। একজন নিম্ন আয়ের মানুষের পরিবারেও এ চালের ব্যবহার হবে।’ ব্যবসায়ীদের অ্যারোমেটিক চালের দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল আলম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন, বাংলাদেশ অটো মেজর হাস্কিং মিল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী, শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী, চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।