২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ব্যবসায়ী বললেন, ‘জরিমানা দেব না, পারলে গ্রেপ্তার করুন’

জরিমানা দেবেন না বলে টাস্কফোর্সের সদস্যদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন ব্যবসায়ী মো. আজিজুল হক(নীল টিশার্ট)। আজ বেলা ১১টায় চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারেছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে চলছিল জেলা বিশেষ টাস্কফোর্সের অভিযান। নিত্যপণ্যের দাম তদারক করতে টাস্কফোর্সের সদস্যরা সবজির আড়তে আড়তে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে মেসার্স আজিজ ট্রেডার্স নামে এক আড়তে যান কর্মকর্তারা। সেখানে সবজি কেনার রসিদ না রাখায় আড়তদারকে জরিমানা করা হয়। তবে জরিমানা দেবেন না বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন আড়তদার আজিজুল হক। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জরিমানা দেব না, পারলে গ্রেপ্তার করুন।’

আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার ও চৌমুহনীর কর্ণফুলী মার্কেটে অভিযান চালায় টাস্কফোর্সের পৃথক দুটি দল। এ সময় অন্তত ৮টি দোকানে অনিয়ম দেখতে পান কর্মকর্তারা। অনিয়ম প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে হট্টগোল করেন আড়তদারেরা।

বেলা ১১টার দিকে টাস্কফোর্সের সদস্যরা রিয়াজউদ্দিন বাজারে সবজির আড়তে অভিযান চালান। এ সময় দেখা যায়, ব্যাপারী থেকে সবজি কিনে ক্রয় রসিদ নেননি আড়তদারেরা। আড়তে কমিশন ভিত্তিতে বিক্রি হয় সবজি। এ ছাড়া হালনাগাদ করা হয় না প্রতিদিনের পণ্যের দাম। অভিযানে রসিদ না রাখার বিষয়ে নানা যুক্তি তুলে ধরেন আড়তদার ও বিক্রেতারা।

মেসার্স আজিজ ট্রেডার্স নামের এক আড়তে ঢুকে দেখা যায়, ক্রয় রসিদ রাখেননি দোকানি। আড়তদার আজিজুল হককে পণ্যের ক্রয়মূল্যের নথিপত্রের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি। একপর্যায়ে তাঁকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে তিনি জরিমানা দেবেন না বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তাঁকে হেফাজতে নেন ম্যাজিস্ট্রেট। পরে অপরাধ স্বীকার করে জরিমানা দেওয়ার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

রিয়াজউদ্দিন বাজারে অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইউছুফ হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহীদ ইশরাক ও টাস্কফোর্সের সদস্যসচিব ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার।

একই অভিযানে পেয়ার বাবা বাণিজ্যালয়কে একই অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে তিনিও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। পরে সেখানে রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির নেতারাও আসেন। তাঁদের ভাষ্য, শুরু থেকেই রিয়াজউদ্দিন বাজারে কমিশন ভিত্তিতে ব্যবসা হচ্ছে। ব্যাপারীরা রসিদ সংরক্ষণ করেন না। আড়তদারেরা বিক্রয় রসিদ সংরক্ষণ করেন শুধু।

এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউছুফ হাসান ব্যবসায়ীদের বলেন, ব্যাপারী থাকেন ঠাকুরগাঁওয়ে। তাঁর পণ্য বিক্রি হচ্ছে এখানে। কে কীভাবে পণ্য আনল, কীভাবে দাম নির্ধারণ করা হলো, এ নিয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই। কমিশন এজেন্ট বলে আইনে কোনো ‘টার্ম’ নেই। আইনে কেন নেই—ব্যবসায়ীদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটি নিয়ে আপনারা সরকারের কাছে আবেদন করুন। আপনাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেবে সরকার।’

এদিন কর্ণফুলী মার্কেটে পৃথক অভিযানে চারটি প্রতিষ্ঠানকে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার অপরাধে চারটি মামলায় সাড়ে চার হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স না থাকায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল আমিন হোসেন। এ ছাড়া ছাত্র প্রতিনিধিসহ জেলা বিশেষ টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।