‘এইডাই আমার বড় সন্তান, ছেলে ছাড়া আমি অনে ক্যামনে বাঁচুম’
‘সকালে নাশতা খাওয়ার পর কার যেন একটা ফোন আসল। ওই ফোন পাইয়া আমার ছেলেডা হোন্ডা (মোটরসাইকেল) নিয়া বাইর অইয়া গেল। এরপর হুনি, দুর্ঘটনায় আমার বুকের ধনডা মইরা গেল। এইডাই আমার বড় সন্তান। কোরআনের হাফেজ ছিল। ছেলে ছাড়া আমি অনে ক্যামনে বাঁচুম...।’
ঘরের উঠানে রাখা ছেলের লাশের সামনে এভাবে আহাজারি করছিলেন রেখা আক্তার। তাঁর ছেলে মো. রায়হান (১৬) মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার পথে আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কাউয়াদী এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হয়। এ দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের আরেক আরোহী রায়হানের বন্ধু মো. সায়েম (১৬) গুরুতর আহত হয়েছে।
নিহত রায়হান চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার আশ্বিনপুর গ্রামের বাবুল সরকার ও রেখা আক্তার দম্পতির ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রায়হান বড়। রায়হান আশ্বিনপুর এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। সম্প্রতি সে কোরআনের হাফেজ হয়। আহত সায়েম আশ্বিনপুর গ্রামের সরোয়ার খানের ছেলে। তাকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবার সূত্র জানায়, পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে রায়হান বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে তার বন্ধু মো. সায়েমকে নিয়ে সকালে বাড়ি থেকে রওনা দেয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কাউয়াদী এলাকায় পৌঁছালে তাদের মোটরসাইকেলটিকে সামনের দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেলটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এ সময় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় রায়হান। খবর পেয়ে স্বজনেরা ঘটনাস্থলে যান এবং রায়হানের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। গুরুতর আহত সায়েমকে তার স্বজনেরা উদ্ধার করে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ঘটনাটি নিশ্চিত করে মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালেহ আহাম্মদ বলেন, নিহত কিশোরের বাড়ি মতলব দক্ষিণে হলেও ঘটনাস্থল দাউদকান্দি এলাকায়। তাঁর থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি।
দুপুরে আশ্বিনপুর গ্রামে রায়হানের বাড়িতে দেখা যায়, পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের মাতম চলছে। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার মা রেখা আক্তার। রায়হানের লাশের পাশে বসে তাঁর বোনের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। রায়হানের বড় চাচা মো. ফারুক বলেন, রায়হান খুব ভালো ছেলে ছিল। মেধাবীও ছিল। তার এ অকালমৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টকর। পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করার প্রস্তুতি চলছে।