খননযন্ত্র দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বেলতৈল সেতুর পশ্চিম পাশে কাটাখালী নদীতে তিনটি খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার কাটাখালী নদীতে চারটি খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বেলতৈল এলাকায় সম্প্রতিছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘদিন ধরে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার কাটাখালী নদীতে চারটি খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। এতে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে। এ ছাড়া এভাবে বালু তোলায় বেলতৈল সেতুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, নদী থেকে বালু তোলার জন্য সরকারিভাবে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।

৫ ফেব্রুয়ারি দেখা যায়, ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বেলতৈল সেতুর পশ্চিম পাশে কাটাখালী নদীতে তিনটি খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। যেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, এর চারপাশে ফসলি জমি। সেখানে ধান লাগানো রয়েছে। যেসব স্থান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, সেখানে নদীর গভীরতাও বেশি। কয়েকটি স্থানে নদীর পাড় ভেঙে গেছে। সেখান থেকে অল্প অল্প ভেঙে ফসলি জমি নদীতে পড়ে যাচ্ছে। ফসলি জমির ওপর দিয়ে খননযন্ত্রের পাইপ টানা হয়েছে। বালু তোলার কারণে ফসলি জমি ভেঙে নদীর আকার বড় হচ্ছে। নদী থেকে এক-দুই কিলোমিটার দূরে বালু গিয়ে পড়ছে।

খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা বলেন, টানা দুই বছর ধরে ওই নদীতে তিনটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ওই বালু উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। ওই তিন ব্যক্তি বালু বিক্রি করেই এখন প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। কেউ কথা বললে তাঁদের সমস্যা হয়। নানাভাবে হয়রানি করা হয়। তাই কেউ কিছু বলতে চান না।

বেলতৈল এলাকার এক কৃষক বলেন, নদী থেকে বালু তোলার কারণে ক্রমে ফসলি জমি ভেঙে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। আর বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেবে।

ঘোষেরপাড়া এলাকার আরেকজন বলেন, বালু তোলার কারণে নদীর গতিপথ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষায় নদীতে ফসলের জমি ভেঙে যাচ্ছে। এভাবে বালু তোলায় বেলতৈল সেতুটিও হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর আশপাশে বহু কৃষকের জমি এখন নদী হয়ে গেছে। একজন কৃষক বালু তোলার প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁকে ওই চক্র নানাভাবে হয়রানি করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকেরা বলেন, খননযন্ত্রের মালিকেরা হলেন উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের খায়েরপাড়া এলাকার মো. শহীদ মিয়া, আমেত্তি গ্রামের মো. ইদ্রিস ও হাবল মিয়া। তাঁরা সবাই বিত্তশালী। তবে কারও রাজনৈতিক পরিচয় নেই। কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও পান না। দুই বছর আগে একবার স্থানীয় প্রশাসন ওই বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছিল। এরপর আর কখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

খননযন্ত্রের মালিক শহীদ মিয়া বলেন, ‘আমার ড্রেজার নদীতে আছে ঠিকই। তবে বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। নদীতে আরও দুটি ড্রেজার আছে, তাঁদেরটার খোঁজ নেন। তাঁদের গুলো সব সময় চলে।’

অবৈধভাবে বালু তোলার ঘটনায় জড়িত মো. ইদ্রিস বলেন, ‘দেখেন, ওই নদীতে আমি একাই বালু তুলছি, এমন না। সবার ড্রেজার যদি বন্ধ করা হয়, তাহলে আমারটাও বন্ধ করে রাখব।’ আর এ বিষয়ে হাবুল মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।

মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা বলেন, ওই নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে সরকারিভাবে কাউকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। যাঁরা বালু উত্তোলন করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।