কেএনএফের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টার বৈঠক, সংঘাত বন্ধে ‘একমত’

বান্দরবান জেলার মানচিত্র

পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) নেতাদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেছেন জেলা পরিষদ গঠিত শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যরা। আজ বুধবার বেলা ১১টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষ শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচনা অব্যাহত রাখা ও বৈঠক চলাকালে সংঘাত বন্ধ রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের সভাকক্ষ থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির নেতারা কেএনএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠকে যুক্ত হন। বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ১২ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তবে কেএনএফের পক্ষে সংগঠনের মুখপাত্র লালজংময় বম ওরফে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ময়ার নেতৃত্বে চারজন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। কেএনএফের প্রতিনিধিরা প্রত্যেকে আলাদাভাবে ভিন্ন জায়গা থেকে মুঠোফোনে সংযুক্ত হয়েছেন বলে বৈঠকে জানান।

প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে কেএনএফ সদস্যদের সরাসরি সংলাপে বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সংলাপে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়েও নিশ্চিত করা হয়েছে। জবাবে কেএনএফের লালজংময় বম ও লালসাংলম বম তাঁদের দাবির বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়েছেন। এ সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রাখার ব্যাপারে তাঁরা একমত পোষণ করে বলেন, উভয় পক্ষকেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, বৈঠকের আগেই কেএনএফকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁদের সব দাবিদাওয়া সংবিধানের আলোকে হতে হবে।

বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির দুর্গম এলাকাগুলোয় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত এবং কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গত ২৯ মে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। শুরু থেকেই কমিটি আলোচনার জন্য কেএনএফ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে আগামী বৈঠক কখন হবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি।

কেএনএফ নামের সংগঠনটি গত বছরের মাঝামাঝিতে বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে। এই সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন বম জনগোষ্ঠীর নাথান বম। সংগঠনটির দাবি, বম, পাংখোয়া, লুসাই, খুমি, খেয়াং ও ম্রো—ছয়টি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে নেমেছে তারা। তবে ছয়টি জনগোষ্ঠীর কথা বলা হলেও কেএনএফে মূলত বম জনগোষ্ঠীই রয়েছে।

কেএনএফের বিরুদ্ধে গোপন আস্তানায় সমতলের জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠে। গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেএনএফ ও শারক্বীয়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান শুরু করে। ২৩ জুন ঢাকায় গ্রেপ্তার শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা শামীম মাহফুজও কেএনএফের আস্তানায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।