কেক-পেটিস খাওয়ার পর দুই বোনের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

গাজীপুর মহানগরীর সালনা ইপসা গেট এলাকায় দোকান থেকে কেক ও পেটিস এনে খাওয়ানোর এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই বোনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সকালে শিশুদের বাবা আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় মামলা করলে সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন গাজীপুর সদর থানার দক্ষিণ সালনা এলাকার দোকানি সাইফুল ইসলাম (৪৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মো. সোহেল (৪৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর থানার কোনাউর এলাকার শহিদুল ইসলাম (২৫) ও একই গ্রামের মোহাম্মদ হোসেন (৪৫)। এর মধ্যে সাইফুল ইসলামের দোকান থেকে কেক ও পেটিস দুই শিশুসন্তানকে খাইয়েছিলেন আশরাফুল। গ্রেপ্তার অন্যরা সালনা এলাকার একটি বেকারির কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ওই বেকারি থেকে সাইফুলের দোকানে কেক ও পেটিস সরবরাহ করা হয়। গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে দুই বোনের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় ওই দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। তাই খাদ্যে বিষক্রিয়ার উৎস খোঁজায় বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া ওই পরিবারের মধ্যে কোনো ধরনের কলহ বা তাঁদের সঙ্গে কারও শত্রুতা আছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গতকাল রোববার কেক ও পেটিস খাওয়ার পর আশামণি (৬) ও তাঁর ছোট বোন আলিফা আক্তার (২) অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয়। নিহত শিশু দুটি ওই এলাকার ভাড়াটে বাসিন্দা ও কারখানার শ্রমিক আশরাফুল ইসলামের মেয়ে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন বলেন, নিহত দুই শিশুর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের মৃত্যু খাদ্যে বিষক্রিয়ায় হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে খাদ্যে বিষ কোথা থেকে আসতে পারে।

গাজীপুর সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম বলেন, একসঙ্গে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় দুই বোনের মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। খাবারে বিষের উৎসের সন্ধান চলছে। পাশাপাশি পারিবারিক কলহ বা পরিবারটির সঙ্গে কারও পূর্বশত্রুতা আছে কি না, তা–ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ ও স্বজনেরা জানান, গাজীপুর মহানগরীর সালনা ইসপা গেট এলাকার এরশাদ হোসেনের বাড়িতে আশরাফুল ইসলাম সপরিবার বসবাস করেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই কারখানায় কাজ করলেও আশরাফুল পুরোনো চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন গত ডিসেম্বর মাসে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন চাকরিতে যোগদান করার কথা তাঁর। তিনি বাড়িতেই থাকতেন। গতকাল সকালে শিশু দুটির মা সফুরা বেগম কাজে চলে যান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেয়েরা আবদার করলে স্থানীয় দোকান থেকে কেক ও পেটিস কিনে দেন বাবা আশরাফুল। তারা সেগুলো খেয়ে পাশেই খেলা করছিল।

হঠাৎ বড় মেয়ে আশামণি অসুস্থ হয়ে বমি করতে থাকে। তাকে দ্রুত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক আশামণিকে মৃত ঘোষণা করেন। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর ছোট মেয়ে আলিফা আক্তার হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে মারা যায়।

শিশুদের পরিবার যে বাড়িতে ভাড়া থাকে, সেই বাড়ির মালিক এরশাদ হোসেন বলেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করায় বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন তাদের নানি মনোয়ারা বেগম। গতকাল সকালে আশরাফুল স্থানীয় সাইফুলের দোকান থেকে মেয়েদের জন্য কেক ও পেটিস কিনে দিয়ে বাইরে যায়। কেক খাওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায় শিশুরা। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে। ওই বাসার ভাড়াটে নিহত শিশুদের ফুফাতো ভাই ছয় মাস বয়সী সিয়ামও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ওই দোকান থেকে আনা কেক শিশুদের সঙ্গে খেয়েছিল ১২ বছর বয়সী আলপনা আক্তার। সে এই প্রতিবেদককে বলে, ‘কেক আমিও খেয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের কিছু হয়নি। কেক খাওয়ার পর আশামণি বমি করে আর আলিফা চিৎকার শুরু করে।’

আজ বিকেলে শিশুদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে কল করলে ফোন ধরেন শিশুদের মা সফুরা বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন গাড়িতে আছি। মেয়েদের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি।’ তাঁদের বাড়ি শেরপুর সদর থানার টিটকারচর দিঘলদি এলাকায়।