কাউন্সিলরের নেতৃত্বে উচ্ছেদের প্রতিবাদ

গত ২৮ জুলাই থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এ অভিযান চলে পাঁচ দিন।

সিলেট নগরের পাঠানটুলা থেকে আখালিয়া এলাকা পর্যন্ত সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে গত ২৮ জুলাই থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এ অভিযান চলে পাঁচ দিন। এতে নেতৃত্ব দেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অভিযানে তিনটি বহুতল ভবনসহ অর্ধশতাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মখলিছুর রহমানের নেতৃত্বে ওই উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে মতবিনিময় সভা হয়।

উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, সওজ অধিদপ্তরের জায়গা দখল করে কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে বহুতল ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ করেন। অনেক দিন ধরেই এসব স্থাপনার মালিকদের সওজ কর্তৃপক্ষ স্থাপনা সরিয়ে নিতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ নানাভাবে তাগাদা দেয়। কিন্তু স্বেচ্ছায় তাঁরা স্থাপনা না সরানোয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এসব স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করছে।

সিটি করপোরেশনের চলমান উচ্ছেদ অভিযানকে ‘দুঃখজনক ও অমানবিক’ উল্লেখ করে মঙ্গলবার রাতে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় মতবিনিময় ও পরামর্শ সভা হয়। আল মদিনা জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির মোতোয়ালি খলিলুর রহমান খান সভায় সভাপতিত্ব করেন। সেলিম আহমদের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সুজাত আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল খালিক ও জগদীশ চন্দ্র দাস, মোগলগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হিরন মিয়া ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শানুর মিয়া। এ সময় স্থানীয় বিপণিবিতান ও ভবনের মালিকেরাও বক্তব্য দেন।

* জায়গা দখল করে কিছু ব্যক্তি বহুতল ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ করেন। * সওজ কর্তৃপক্ষ স্থাপনা সরিয়ে নিতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ নানাভাবে তাগাদা দেয়।

বক্তারা বলেন, সিটি কর্তৃপক্ষ ও সওজ নিয়মনীতি না মেনে হঠাৎ বুলডোজার নিয়ে বাসায় উপস্থিত হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পত্রিকা, মাইকিং ও গণবিজ্ঞপ্তি সম্পত্তি উচ্ছেদের নোটিশ হতে পারে না। সড়ক উন্নয়নের প্রয়োজন হলে আলোচনা অথবা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে হতে হবে।

সভা থেকে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়। এতে হিরন মিয়া আহ্বায়ক ও মো. মখলিছুর রহমান সদস্যসচিব মনোনীত হয়েছেন। এ ছাড়া আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন আবদুল খালিক, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস, খলিলুর রহমান খান, রফিকুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার, আবদুল বাছিত ও এনাম আহমদ। এ কমিটি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি অবহিত করবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

জানতে চাইলে কাউন্সিলর মখলিছুর বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উচ্ছেদকৃত স্থাপনা সওজের জায়গায় নির্মিত হয়েছে। অথচ স্থাপনার মালিকদের নামজারি আছে, নিয়মিত খাজনা দেন, সিটি করপোরেশনকে হোল্ডিং ট্যাক্স দেন, ট্রেড লাইসেন্সও আছে। দু-তিন মালিক হাতবদল হওয়ার পর অনেকে জায়গা কিনেছেন। এখন বলা হচ্ছে, এসব জায়গা সওজের। স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে জনগণ আমাকে ডাকলে তো আমি সেখানে যেতে বাধ্য। আবার করপোরেশনের অভিযানের সময় ডাকলেও আমি যেতে বাধ্য। তবে এটি যৌক্তিক ও সুন্দরভাবে সমাধান হোক।’

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ১৯৭২ সালে সওজ জমি অধিগ্রহণ করেছিল। পরে অবৈধভাবে সওজের জায়গায় অনেকে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। সওজের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় নগরে জলাবদ্ধতা, যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ড্রেনেজের নির্মাণকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। উচ্ছেদ অভিযান শেষে সড়কের উভয় পাশে নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ এবং যানজট নিরসনে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের মতবিনিময় সভা করার বিষয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সভায় উপস্থিত কয়েকজন ছাড়া সবাই সওজের জায়গার দখলদার। নগরবাসীর স্বার্থেই অবৈধ স্থাপনা থাকতে দেওয়া হবে না। স্থানীয় ব্যক্তিরা স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় চেয়েছেন। তাই অভিযান কয়েক দিন স্থগিত রেখে সময় দেওয়া হয়। শিগগিরই অভিযান শুরু হবে।

বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধার করতে গিয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার আশপাশ থেকে কিছু দোকানপাট উচ্ছেদ করেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

শুক্রবার সকালে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে সিটি করপোরেশনকে জায়গা উদ্ধারে আহ্বান জানানো হয়। পরে সিটি কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযানে নামে।