যান চলাচলের জন্য আজ খুলছে লোহালিয়া সেতু

এই সেতু দিয়ে জেলা সদরের সঙ্গে বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপার সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

পটুয়াখালীর গলাচিপা-কলাগাছিয়া সড়কের লোহালিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতু
ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী শহরসংলগ্ন লোহালিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুর উদ্বোধন হবে আজ মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন লোহালিয়া সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। একই সময় প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, সম্প্রসারণ প্রকল্পসহ আর্থসামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিশ্চিত করেছে।

লোহালিয়া সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০১ কোটি টাকা। ৪৬৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুর মাঝখানে একটি ইস্পাতের স্প্যান ব্যবহার করা হয়েছে। সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার ফলে পটুয়াখালী জেলা সদরের সঙ্গে বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

এলজিইডি পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে পটুয়াখালীর গলাচিপা-কলাগাছিয়া সড়কের লোহালিয়া নদীর ওপর এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। সে সময় সেতুটির নির্মাণব্যয় ধরা হয় ৪৬ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর কার্যাদেশ নিয়ে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণের শুরুতেই ৪ দশমিক ৯৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণে ৩ কোটি ৭৫ লাখ ২২ হাজার ৩৭৯ টাকা ব্যয় করা হয়।

এদিকে সেতু নির্মাণের ৫৫ শতাংশ কাজ শেষে হওয়ার পর দেখা দেয় জটিলতা। ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিইডি) মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুরুতে লোহালিয়া সেতুর উচ্চতায় বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন ছিল ৯ দশমিক ৫৭ মিটার। অনুমোদনের সময় পায়রা বন্দরের কথা বিবেচনা করা হয়নি। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ফলে ভবিষ্যতে লোহালিয়া নদী দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করবে। লোহালিয়া সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় সে সময় সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়।

এ নিয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই এলজিইডি মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় আবার লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পায়রা বন্দরের কথা বিবেচনা করে সেতুর উচ্চতা আরও বাড়ানো হয়েছে। লোহালিয়া নদীর মূল চ্যানেলে ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (নদীর সর্বোচ্চ পানির স্তর থেকে সেতুর উচ্চতা) রাখতে ১৩ দশমিক শূন্য ৫ মিটার উঁচু করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নদীর মধ্যে পিলার বসানো এড়াতে দুই পাড়ে দুটি পিলার রেখে মাঝখানে একটি ইস্পাতের স্প্যান দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে গতকাল সোমবার সেতু এলাকায় দেখা যায়, সেতুর দুই পাশে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসানো হয়েছে। সেতুর রেলিং রং করা হয়েছে। সেতুর দুই পাড়ে অনেক দর্শনার্থী দৃষ্টিনন্দন এ সেতু দেখতে আসছেন। সন্ধ্যার পর সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয় সেতুটি।

সেতুর উত্তর পারের লোহালিয়া ইউনিয়নের ইদ্রাকপুর গ্রামের কৃষক সোবাহান প্যাদা বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। এখন সরাসরি শহরে যাতায়াত করা যাবে।

এলজিইডি পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর দুই পাশে আরসিসি কাঠামো থাকলেও নদীর মাঝখানে একটি ইস্পাতের কাঠামো রয়েছে। ইস্পাতের কাঠামোর দৈর্ঘ্য ১০৭ মিটার। চীন ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ ইস্পাতের কাঠামো নির্মাণ করেছে।