রাঙামাটিতে ৯৫ শতাংশ মামলাই লিগ্যাল এইডে নিষ্পত্তি

রাঙামাটিতে গত এক বছরের আপস মীমাংসায় প্রায় দেড় হাজার মামলা বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা লিগ্যাল এইড। আপসে দ্রুত নিষ্পত্তি ও সমাধান পেয়ে জনগণের আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে এই আইনগত সংস্থাটি। এ কারণে থানা ও আদালতে কমছে মামলাজট।

রাঙামাটি লিগ্যাল এইড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে জেলায় ১ হাজার ৩৩২টি মামলার আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৭২টি আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকি ৬০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তির হার ৯৫ শতাংশের বেশি। এর আগে ২০২২ সালে ৯৪৮টি লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে আবেদন জমা পরে। এর মধ্যে ৯০৩টি নিষ্পত্তি করা হয়। এ ছাড়া গত এক বছরে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে ৩৮২ জন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১ হাজার ৩২৬টি আইনগত পরামর্শ দেওয়া হয়। আপসের মাধ্যমে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ টাকা আদায় করা হয়েছে। আদায় করা এসব টাকা ক্ষতিগ্রস্তরা পেয়েছেন।

তিন মাসেই সুবিচার
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের কুচখালী মৌজার আমতলী এলাকায় এক একর জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলছিল। ওই জমি নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জানুয়ারি সেখানে যান রাঙামাটি লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী জজ মো. জুনাইদ। আমতলীর বিরোধপূর্ণ জমি পরিদর্শন করে বাদী-বিবাদী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন বিচারক। সেখানে তিনি বিরোধের বিষয়টি চিহ্নিত করেন। পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষ রাঙামাটি লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে আসেন। সেখানে বিচারক তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেন। এতে উভয় পক্ষ সুবিচার পেয়ে সন্তুষ্ট হন। আবেদনের তিন মাসের মধ্যে এই মামলা সুবিচার পেয়েছেন বলে জানান বাদী জয়নাল ও  মো. ফারুক।

রাঙামাটি লিগ্যাল এইড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে রাঙামাটি আদালতে লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম শুরু হয়ে। তবে বিচারক না থাকায় তেমন কোনো মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। ২০১৯ সালে প্রথম শেখ মোহাম্মদ বদিউল আলম নামের একজন সিনিয়র সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়া হয়। শুরুতে তেমন মামলার আবেদন জমা পড়েনি। ২০১৯ সালে সিনিয়র সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়ার পর কিছু মামলা জমা পড়তে শুরু করে। করোনার ভাইরাসের কারণে বিচার পরিচালনা ক্ষেত্রে ধীরগতি ছিল। ২০২১ সাল পর্যন্ত মাত্র ২৬০টি মামলা জমা পড়ে। গত ২০২১ সালে ৯ ডিসেম্বর সিনিয়র সহকারী জজ মো. জুনাইদ যোগদান করার পর পুরোদমে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। পরে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে দেওয়ানি, পারিবারিক ও ফৌজদারি মামলার বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় জেলায় অসহায় ও গরিব মানুষের মধ্যে লিগ্যাল এইডের প্রতি আস্থা বেড়ে যাচ্ছে।

কাউখালী উপজেলার ইউপি সদস্য মো. সেলিম বলেন, ‘আমাদের কাউখালী উপজেলার ৭০ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ আছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় সংঘাত, ঝগড়া ও মারামারি হতো। রাঙামাটি লিগ্যাল এইড কার্যক্রম শুরু করার পর এখন এ ধরনের ঘটনা অনেকটা কমে যাচ্ছে। এভাবে আপসে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলে বিরোধ অনেকাংশে কমে আসবে।’

রাঙামাটি লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী জজ মো. জুনাইদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কয়েক বছরের মধ্যে রাঙামাটিতে আস্থা তৈরি করতে পেরেছি। দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি পেয়ে মানুষ লিগ্যাল এইডের দিকে ঝুঁকছেন। গত এক বছরের আমরা ১ হাজার ৪৮১টি মামলা আপস মীমাংসা করে দিয়েছে। পাহাড়ে অধিকাংশ মামলা ভূমি বিরোধ নিয়ে। পাশাপাশি পারিবারিক মামলা রয়েছে। এসব মামলা উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠক করে মীমাংসা করে দেওয়া হয়। এসব মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার কারণে আদালতে মামলাজট অনেকাংশে কমে এসেছে।’