নয়টির মধ্যে পাঁচটি স্টেশন বন্ধ

৫টি স্টেশন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বন্ধ থাকায় নানাভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছে লোকজন। রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব স্টেশনে লোকবল নেই।

প্রায় ২০ বছর ধরে নীলফামারী কলেজ রেলস্টেশনটি বন্ধ আছে
ছবি: প্রথম আলো

নীলফামারী জেলা শহরের মধ্যস্থলে অবস্থিত নীলফামারী কলেজ রেলস্টেশনটি স্বাধীনতার আগে স্থাপিত। কলেজের ছাত্রদের আন্দোলনের পর স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়। গুরুত্ব বিবেচনায় এ পথে চলাচলকারী সব ট্রেনের যাত্রাবিরতি ছিল স্টেশনটিতে। কিন্তু প্রায় ২০ বছর ধরে স্টেশনটি বন্ধ।

জেলার ৫৯ কিলোমিটার রেলপথে ৯টি রেলস্টেশন আছে। এর মধ্যে কলেজ স্টেশনসহ ৫টি স্টেশন ২০ বছর ধরে বন্ধ থাকায় নানাভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছে লোকজন। বাকি চারটি স্টেশন হচ্ছে মিরজাগঞ্জ, তরুণীবাড়ী, দাড়োরায়ানী, খয়রাতনগর স্টেশন। রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব স্টেশনে লোকবল নেই। তাই এসব স্টেশনে ট্রেন থামে না।

জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে বন্ধ স্টেশনগুলো চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওবায়দুর রহমান, নীলফামারী রেলস্টেশনের মাস্টার

নীলফামারী উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, বন্ধ থাকা স্টেশন এলাকার বাসিন্দারা যাত্রীবাহী বাসসেবা থেকেও বঞ্চিত। স্টেশনগুলো চালু করা গেলে এলাকার মানুষ রেল–সুবিধার আওতায় আসবে। তাদের সময় বাঁচবে, খরচ কমবে। পণ্য পরিবহনে সুবিধা বাড়বে। স্টেশনগুলোর আশপাশে জমে উঠবে ব্যবসা-বাণিজ্য, এতে করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এভাবে পড়ে থাকায় অবকাঠামোগুলো নষ্ট হচ্ছে।

নীলফামারী কলেজ স্টেশনে চা–দোকান আছে সায়মুল ইসলামের (৭০)। তাঁর বাবা মৃত নকু মামুদ রেলের কুলি ছিলেন। সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকে কলেজ স্টেশনে আসা-যাওয়া তাঁর। তিনি বলেন, একসময় শহরের মানুষজন এই স্টেশন থেকেই ট্রেনে ওঠানামা করত। জমজমাট ছিল স্টেশনটি। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচুর মালামাল যেত। তাঁর বাবাসহ ১৬ জন কুলি কাজ করতেন এই রেলস্টেশনে। কিন্তু স্টেশনটি বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের সঙ্গে তাঁদেরও দুর্ভোগ নেমে আসে। তিনি বলেন, আগে কলেজ স্টেশন হয়ে রাজশাহী, খুলনা, গোয়ালন্দ ও আমনুরা জংশন পর্যন্ত একাধিক ট্রেন চলত। এ ছাড়া পার্বতীপুর থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত আরও কয়েকটি ট্রেন চলত। এসব ট্রেনে নীলফামারী ছাড়াও পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের লোকজন চলাচল করত।

স্টেশনের আরেক চা–পান ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম (৫২) বলেন, ২০০০ সাল থেকে এই স্টেশনে কোনো লোকজন না থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্টেশন ভবনের চাবি তাঁকে দিয়ে গেছেন রেলের লোকজন। এ জন্য প্রতি মাসে পারিশ্রমিক পান ১ হাজার ৩০০ টাকা।

একই অবস্থা ডোমার উপজেলার মিরজাগঞ্জ রেলস্টেশনের। এ স্টেশনটিও স্বাধীনতার আগে স্থাপিত। ডোমার, ডিমলা এবং পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার মানুষ এ পথ দিয়ে যেত। মিরজাগঞ্জ গ্রামের স্কুলশিক্ষক আমিনার রহমান বলেন, ‘আগে এ স্টেশন থেকে ট্রেনে করে নীলফামারী কলেজে যাওয়া-আসা করে লেখাপড়া করেছি। তখন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ট্রেন চালু ছিল।’

একই গ্রামের আলতাফ হোসেন (৫৫) বলেন, এখন এই স্টেশনের ওপর দিয়ে চিলাহাটি-পার্বতীপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত ১২টি ট্রেন চলাচল করছে। অথচ এই স্টেশনে কোনো ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই, স্টেশনটি বন্ধ আছে। এর ফলে এলাকার মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে রেল–সুবিধা থেকে।

নীলফামারী রেলস্টেশনের মাস্টার ওবায়দুর রহমান বলেন, জনবল সংকটের কারণে স্টেশনগুলো বন্ধ আছে। জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে স্টেশনগুলো চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘আমাদের যতজন স্টেশনমাস্টার প্রয়োজন, তার অর্ধেক লোকবল আছে। জনবল সংকটের কারণে বন্ধ থাকা রেলস্টেশনগুলো চালু করা যাচ্ছে না। আশা করছি, আগামী বছরের মার্চ মাস নাগাদ অনেকগুলো স্টেশন চালু করা যাবে।’