‘ভালো লোক জিতলি, আমরা গরিব মানুষ কিছু চাইলি পাব’

দুই বোন আরজিনা বেগম ও লিলি বেগমের কোলে চড়ে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন শামসুন্নাহার বেগম। বুধবার খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার দেলদার আহমেদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার দেলদার আহমেদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, দুপুর ১২টা। দুই বোন আর্জিনা বেগম ও লিলি বেগমের কোলে করে ভোট দিতে এসেছিলেন শামসুন্নাহার। দুজন তাঁকে কোলে নিয়ে কেন্দ্রের দোতলায় তোলেন।

ভোট দিয়ে ফেরার পথে আনসার সদস্যদের বসার বেঞ্চে বসে পড়েন শামসুন্নাহার। সেখানে শামসুন্নাহার ও তাঁর দুই বোনের সঙ্গে কথা হয়। ভোট দিতে পেরে খুশি শামসুন্নাহার। তিনি বলেন, ‘আজ খুব গরম। তারপরও ভোট যখন দিতি পারব, তালি নষ্ট কুরি লাভ কি। ভোট দি একটা মাতব্বর তৈরি করা ভালো। ভালো লোক জিতলি, আমরা গরিব মানুষ কিছু চাইলি পাব।’

শামসুন্নাহারদের বাড়ি ছিল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা এলাকায়। আইলার বছরখানেক আগেই নদীভাঙনে ঘর হারানোর পর চলে আসেন খুলনা শহরে। সেখান থেকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় বসবাস শুরু করেন। দোকানে দোকানে কলসে করে পানি দিয়ে যে উপার্জন হতো, তাতেই সংসার চালাতেন। পা হারানোর পর এখন সেই উপায় নেই। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, এখন একাই থাকেন। মানুষের সাহায্য-সহানুভূতি নিয়ে চলে তাঁর একার সংসার।

কীভাবে পা হারালেন, জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। পবিত্র ঈদুল আজহার দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস সংগ্রহ করছিলেন শামসুন্নাহার বেগম। সঙ্গে বড় মেয়ের দুই ছেলে আর নিজের ছোট মেয়ে ছিল। হঠাৎ খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে এক মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয় নাতিকে। ছিটকে পড়ে যাওয়ার সময় তাঁকে ধরতে যান শামসুন্নাহার। এ সময় পেছন থেকে আসা অন্য একটি ছোট গাড়ি তাঁর শরীরের ওপর উঠে যায়। গুরুতর আহত ও অচেতন অবস্থায় তাঁকে নেওয়া হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। একটা সময় পর ডান পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে তাঁর।

এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে তাঁর। ঝড়ের আঘাতে তাঁর ভাড়া করা বসতঘরটিও উড়ে গেছে। শামসুন্নাহার বলেন, ‘৫০০ টাকা মাসিক ভাড়ায় একটা ঘরে থাকতাম। ঝড়ে সেটা উড়ে যাওয়ার পর মেজ বোন লিলি বেগমের বাসায় উঠছি। সেও অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে। আজ বোনেরা ভোট দিতে নিয়ে এসেছে। যেকোনো ভোটের সময় আমি আসতে চাইলে, ওরা আমাকে নিয়ে আসে।’
শামসুন্নাহার এত কষ্ট করে ভোট দিতে এলেও দেলদার আহমেদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আজ বুধবার ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা অলস সময় পার করছেন। প্রার্থীর এজেন্ট অনেককে টেবিলের ওপর মাথা দিয়ে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়।

১১ নম্বর কেন্দ্রের একটি ভোটকক্ষের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অনুকা ঢালী বলেন, ‘কেন্দ্রে একেক কক্ষে ৩২৪ জন করে ভোটার। ভোট গ্রহণের তিন ঘণ্টা পর একেক কক্ষে ভোট পড়ছে ২০ থেকে ৩০টা করে। আসলে আমাদের অলস সময় কাটছে।’

১১ নম্বর কেন্দ্রে ভোটার ৩ হাজার ৩৭১ জন। বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। ভোট গ্রহণের প্রথম সাড়ে তিন ঘণ্টায় ওই কেন্দ্রে কয়েকটি কক্ষে ৫ শতাংশেরও কম ভোট পড়েছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। তবে ভোটারের উপস্থিতি কম।

১০ নম্বর কেন্দ্রে ৩ হাজার ৪০৮ জন ভোটারের মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩৭২টি। ভোট পড়ার হার প্রায় ১১। ১০ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. ফারুক আক্তার বলেন, ভোট দেওয়া না দেওয়া ভোটারের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। হয়তো দুপুরের পর উপস্থিতি বাড়তে পারে।

কেন্দ্রের ভেতরে ভোটার না থাকলেও কেন্দ্রের বাইরে জমজমাট অবস্থা। প্রার্থীদের সাদাকালো-রঙিন পোস্টারে চারপাশ সয়লাব। প্রায় প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনী বুথ রয়েছে। ভোটার স্লিপ দেওয়ার পাশাপাশি সেখান থেকে ভোটারদের পান-সুপারি দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে। কেন্দ্রে ভোটারদের আনা-নেওয়ার জন্য প্রার্থীরা ভ্যান ও ইজিবাইকের ব্যবস্থা করেছেন। ভ্যানের সামনে প্রার্থীদের পোস্টার লাগানো।

নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলার ৬৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে।