উখিয়ায় র‍্যাবের অভিযানে আরসার দুই কমান্ডারসহ চারজন গ্রেপ্তার, ৪৩ কেজি বিস্ফোরক, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

কক্সবাজারের উখিয়ার র‍্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার আরসার দুই কমান্ডার ও তাঁদের দুই বাংলাদেশি সহযোগী। আজ কক্সবাজার র‍্যাব কার্যালয়ে দুপুরে
ছবি : প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়ার দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) দুই কমান্ডারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এদের মধ্যে রহিমুল্লাহ প্রকাশ মুছা নামের আরসার একজন শীর্ষ কমান্ডার রয়েছেন। গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে দুজন আরসার বাংলাদেশি সহযোগী। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের তেতেলখোলা-বরইতলী পাহাড়ে এ অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের একটি দল। এ সময় ৪৩ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।

আজ বুধবার দুপুরে র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আরসার শীর্ষ দুই কমান্ডারকে গ্রেপ্তারের কথা জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তার আরসার সদস্যরা হলেন উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) বাসিন্দা ও আরসার গান কমান্ডার রহিমুল্লাহ ওরফে মুছা (২৭) এবং মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৪) বাসিন্দা ও আরসার কমান্ডার শামছুল আলম ওরফে মাস্টার শামসু (২৯)। গ্রেপ্তার দুই বাংলাদেশি নাগরিক হলেন কক্সবাজার সদরের বাসিন্দা মো. শফিক (২৮) ও মো. সিরাজ (৩০)। অভিযানে ৪৩ কেজি ৩১০ গ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্য, ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ওয়ান শুটারগান, ৪টি পিস্তলের গুলি, ৩টি ওয়ান শুটারগানের গুলি এবং দুটি মুঠোফোন সেট উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অভিযানে ক্লোরেটস, ব্রোমেটস, পটাশিয়াম ও হেক্সামিথাইলিন টেট্রামাইন–জাতীয় রাসায়নিক পাওয়া গেছে, যা উচ্চ বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরসা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন গ্রেপ্তার দুই কমান্ডার। উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তারা বলেন, মঙ্গলবার মধ্যরাতে র‍্যাবের একটি দল পালংখালীর তেলখোলা-বরইতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক মো. শফিক ও মো. সিরাজকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় দুজনের কাছ থেকে ৬ কেজি ৫৩০ গ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এরপর তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে আরসার দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কমান্ডার রহিমুল্লাহ ও শামছুল আলমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ সময় দুই সন্ত্রাসীর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় আরও ৩৬ কেজি ৭৮০ গ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্য, ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ওয়ান শুটারগান ও বেশ কিছু গুলি।

র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রহিমুল্লাহ ওরফে মুছার বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। ২০১৭ সালে সীমান্ত অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে এসে উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান নেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি আরসায় যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় মুছা অস্ত্র ও বোমা তৈরি প্রশিক্ষণ নেন। মুছা বোমা তৈরি ও অস্ত্র চালানোয় বিশেষ পারদর্শী হওয়ায় সম্প্রতি তাঁকে আরসার গান কমান্ডার করা হয়।

মুছা পাহাড়ে আরসার অন্য সদস্যদের বোমা তৈরি ও অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দিতেন। তিনি আশ্রয়শিবিরের হেড মাঝি আজিম উদ্দিন হত্যা, মাঝি জাফর আলম হত্যা, ৬ রোহিঙ্গা শিক্ষক-ছাত্র হত্যা, এপিবিএন পুলিশের ওপর হামলার মামলাসহ ১২টির বেশি মামলার পলাতক আসামি। ২০২২ সালের নভেম্বরে গোয়েন্দা সংস্থা ও ক্লাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন এবং একজন র‍্যাব সদস্য গুরুতর আহত হন। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মুছাও জড়িত ছিলেন বলে র‍্যাব দাবি করে।

গ্রেপ্তার অপর সন্ত্রাসী শামছুল আলম ওরফে মাস্টার শামসু মিয়ানমারের নাগরিক। ২০১২ সালের শেষে দিকে তিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থান নেন। ২০১৩ সালে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করে শামছুল আলম মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাড়ি জমান। ২০১৮ সালে পুনরায় বাংলাদেশে ফিরে এসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস শুরু করেন। ২০১৯ সালে তিনি আরসায় যুক্ত হন। পরে তিনি অস্ত্র চালনা ও রণকৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। হেড মাঝি হোসেন ও কামাল হত্যাকাণ্ডসহ কয়েকটি মামলার পলাতক আসামি শামছুল।

দুই বাংলাদেশির মধ্যে শফিক কৃষিকাজের পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য এবং মাদক সংগ্রহ করে নিজের বাড়িতে মজুত রাখতেন। পরবর্তী সময়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আরসার শীর্ষ নেতাদের কাছে সরবরাহ করতেন।

গ্রেপ্তার অপর বাংলাদেশি মো. সিরাজ ইজিবাইক টমটম চালনার পাশাপাশি মাদকের কারবার করতেন। শফিকের আনা বিস্ফোরক দ্রব্য তিনি টমটমে করে আরসা নেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন।

উল্লেখ্য, গত ২২ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া-শামলাপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা র‍্যাব আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী হাফেজ নুর মোহাম্মদসহ ছয়জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল।