ফুটবল বিশ্বকাপে যেকোনো বড় দলের খেলা উপলক্ষে সেই দলের জার্সির চাহিদা বেড়ে যায়। ব্রাজিলের জার্সি কিনছেন এক সমর্থক। ছবিটি গতকাল জিন্দাবাজার থেকে তোলা
ছবি: আনিস মাহমুদ

বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা ছুঁয়ে যাচ্ছে সিলেটেও। নগরের বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাত ছেয়ে গেছে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলের জার্সিতে। প্রিয় দলের জার্সি গায়ে জড়াতে ভিড় লেগে আছে এসব দোকানে। বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকেই জমে উঠেছে কেনাকাটা।

বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় দেখে অনেকেরই মনে হবে, ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়েছেন সবাই। সিলেট নগরের জিন্দাবাজারে লন্ডন ম্যানশন নামের একটি বিপণিবিতানে ক্রীড়াসামগ্রীর দোকান বেশি। এই বিপণিবিতানে কয়েক দিন ধরে জমছে ক্রেতাদের ভিড়।

লন্ডন ম্যানশনে একটি ক্রীড়াসামগ্রীর দোকানের মালিক নাদিম আহমদ বলেন, বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি। বেশি বিক্রি হচ্ছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার জার্সি। এ ছাড়া ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি ও পর্তুগালের সমর্থকেরাও পিছিয়ে নেই। সে সঙ্গে ফুটবল বিক্রিও বেড়েছে। অনেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য জার্সি কিনতে আসছেন। আবার অনেকে পুরো দলের নাম লেখানো জার্সি কিনতে আসছেন। বিশ্বকাপকেন্দ্রিক ক্রীড়াসামগ্রী থেকে শুরু করে জার্সি, পতাকা, ব্যান্ড ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।

নাদিম আহমদ বলেন, বড় কিংবা জনপ্রিয় কোনো দলের খেলা থাকলে ভিড় বাড়ে ক্রেতাদের। অনেক সময় ভিড়ের জন্য অনেকে জার্সি না পেয়ে ফিরে যান। কিন্তু বিক্রেতারা চান, যাতে কেউ যেন জার্সি ছাড়া না ফেরেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরের জিন্দাবাজার এলাকার সড়কের পাশে ফেরদৌস ফ্যাশন নামের একটি দোকানে ব্রাজিল দলের জার্সি দেখছিলেন সাহেব আহমদ। তাঁর ১০ বছরের ছেলের জন্য জার্সি কিনতে দরদাম করছিলেন বিক্রেতা মাহাদী হাসানের সঙ্গে। মাহাদী হাসান বলেন, ফুটবলের জার্সি ও শীতের জন্য ট্রাউজার ভালো বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা কিছুটা কমের মধ্যে চান। মূলত ১২০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা পর্যন্ত দামে জার্সি বিক্রি করেন তিনি। এর মধ্যে ২০০ টাকা দামের জার্সি বেশি বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, গত সোম ও মঙ্গলবার আর্জেন্টিনা দলের জার্সি বেশি বিক্রি হয়েছিল। গত বুধবার থেকে ব্রাজিল দলের জার্সি বেশি বিক্রি হচ্ছে।

শাহি ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা আবু বক্কর জিন্দাবাজার এলাকায় গিয়েছিলেন নিজের, স্ত্রীর ও এক বছর বয়সী সন্তানের জন্য জার্সি কিনতে। কিন্তু বিপণিবিতানে এক বছর বয়সী শিশুর জার্সি পাননি। পরে ফুটপাত থেকে একটি জার্সি নিয়েছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার প্রিয় দল আর্জেন্টিনার খেলা হয়েছে। এর আগের দিন জার্সি কিনতে গিয়ে প্রায় আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে।

নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় ফুটপাতে ঝুড়িতে করে জার্সি বিক্রি করছিলেন ফরহাদ হোসেন। তিনি ১৭০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দামের জার্সি বিক্রি করেন বলে জানান। ফরহাদ বলেন, দামি জার্সিগুলোর তেমন ক্রেতা নেই। কম দামের জার্সির ক্রেতা বেশি। আগে অন্য কাপড়ের ব্যবসা করলেও সপ্তাহখানেক ধরে বিশ্বকাপ ফুটবলের বিভিন্ন দলের জার্সি বিক্রি করছেন। তাঁর ঝুড়ি ঘেঁটে দেখা যায়, যে জার্সিগুলো তিনি বিক্রি করছেন, সেগুলোর অধিকাংশই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার।

ফরহাদ বলেন, জার্সি বিক্রি করে কয়েক দিন ধরে দিনে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আয় করছেন। সন্ধ্যার পর থেকে জার্সি কিনতে অনেকেই ভিড় করেন।

ব্রাজিল দল সমর্থন করেন ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম। গতকাল তিনি গায়ে ব্রাজিলের জার্সি জড়িয়ে আরও জার্সি কিনতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি জার্সি কিনতে এসেছি। বন্ধুদের উপহার দেব। জার্সিগুলো পরে রাতে একসঙ্গে খেলা দেখব।’

ক্রীড়াসামগ্রী ও জার্সি বিক্রয় করা এসএনপি স্পোটর্সের মহাব্যবস্থাপক রঙ্গলাল তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বকাপের বড় দুটি দল আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। দুটি দলের জার্সিই ভালো বিক্রি হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত আর্জেন্টিনার জার্সি ভালো বিক্রি হয়েছে। এখন ব্রাজিলের জার্সি বিক্রি হচ্ছে বেশি। তিনি বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত জার্সি ও ক্রীড়াসামগ্রী ভালো বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।