কুমিল্লায় অস্ত্রের মহড়ার ভিডিও ভাইরাল, ছয় দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে অস্ত্রের মহড়া। গত ১২ আগস্ট বিকেলে
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের মাঠে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ছয় দিনেও অস্ত্রধারীদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। পুলিশের দাবি, অস্ত্রধারীদের সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে।

বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘অস্ত্রধারীদের ভিডিও ঘটনার বহুদিন পরে আমাদের কাছে আসে। আমরা অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করেছি। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। শিগগিরই অস্ত্র ও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। অস্ত্রধারীরা আত্মগোপনে থাকায় তাঁদের এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।’

১ সেপ্টেম্বর ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার খোশবাস উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে গত ১২ আগস্ট ওই অস্ত্রের মহড়া হয়। সেখানে টাঙানো শোক দিবসের ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। মহড়ার সময় অস্ত্রধারীদের মাস্ক ও জিনস প্যান্ট পরা অবস্থায় দেখা গেছে। এলাকার লোকজন ও পুলিশ দুজন অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করেছেন। সাদা জামা পরা অস্ত্রধারী হলেন মো. ফরহাদ হোসেন (২৬)। তিনি খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। কমলা রঙের টি–শার্ট পরা ব্যক্তি মো. রিয়াজ হোসেন (২৫)। তিনি একই ইউনিয়নের খোশবাস গ্রামের শাহ আলমের ছেলে।

ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ছয় দিনেও অস্ত্রধারীদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই দুই অস্ত্রধারী এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাঁরা একসময় বিএনপির নেতাদের আশ্রয়ে ছিলেন। এখন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। এর আগেও তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের পক্ষ নিয়ে কখনো অস্ত্র হাতে, কখনো দা, চাকু হাতে তাঁরা প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের খোশবাস, আরিফপুর, আদমপুর, জালালপুর, নারায়ণপুর ও বাঁশতলি এলাকায় উঠতি বয়সী বখাটে তরুণদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র আছে। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে ঝামেলা হলে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পক্ষে অবস্থান নেন। গত ১২ আগস্ট দুপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে খোশবাস উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ ফটকের পাশে একটি ব্যানার টাঙানো হয়। ওই ব্যানারে নিজেদের ছবি দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান রিয়াজ হোসেন ও ফরহাদ হোসেন। বঙ্গবন্ধুর ছবির সঙ্গে একই ব্যানারে ‘সন্ত্রাসীদের’ ছবি দেখে আরিফপুর গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী খোরশেদ আলমের লোকজন ক্ষুব্ধ হন। তাঁরা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি হয়।

ওই দিন বিকেলে খোশবাস উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ মিলনায়তনে বরুড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ এন এম মইনুল ইসলামের অনুসারী আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা মতবিনিময় সভা করেন। ওই সভা শেষে খোশবাস কলেজ মাঠে ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেনের লোকজন খোরশেদ আলমের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এ সময় খোরশেদ আলমের পক্ষও পাল্টা প্রতিরোধ ও হামলা করে। এ সময় রিয়াজ ও ফরহাদ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে মহড়া দেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই দুই অস্ত্রধারী এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাঁরা একসময় বিএনপির নেতাদের আশ্রয়ে ছিলেন। এখন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ‘বদ হারামি’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে অস্ত্র হাতে ওই মহড়ার একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। ওই ভিডিওতে পুলিশ সুপার ও বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক ব্যক্তিকে কথা বলতে শোনা গেছে।

ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অস্ত্রধারী কেউ আমার অনুসারী নন।’

ব্যানার ছেঁড়ার পর হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কবির হোসেন বলেন, ‘ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে দ্বন্দ্ব হলেও রিয়াজ ও ফরহাদ (অস্ত্রধারীরা) আমার কর্মী না।’ তবে তাঁদের ব্যানার ছেঁড়ার ঘটনায় গিয়েছিলেন কেন—প্রশ্নে কবির বলেন, ‘এলাকার ছেলে। তাই গিয়েছিলাম।’

জানতে চাইলে রাতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন বলেন, বরুড়া উপজেলার কোনো ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নেই। অস্ত্রধারী যাঁদের ছবি ও ভিডিও দেখা গেছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হোক। অস্ত্র উদ্ধার করা হোক। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নামে কোনো ধরনের অস্ত্রবাজি করা যাবে না।

অস্ত্রধারী ফরহাদ হোসেন ও রিয়াজ হোসেন মুঠোফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেওয়ায় তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।