গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের খালে পানি সরবরাহ বন্ধ, বিপাকে কৃষক

সেচ প্রকল্পের আওতায় ৪ জেলার পৌনে ৫ লাখ একর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। কিন্তু সেচ প্রকল্পের খালে এখন পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

কুষ্টিয়ায় পদ্মার পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এতে জিকে সেচপ্রকল্পের খাল থেকে সেচের পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গত মঙ্গলবার ভেড়ামারা তিন নম্বর সেতু এলাকায়প্রথম আলো

পদ্মা নদীতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ও খালের ওপর সেতু নির্মাণের কাজ চলায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খালে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে ফসলি জমিতে সেচ দিতে না পরায় চারটি জেলার লক্ষাধিক কৃষক বিপাকে পড়েছেন।

কৃষকেরা বলেন, জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় ৪ জেলার ১৩ উপজেলার পৌনে ৫ লাখ একর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। পানি সরবরাহ বন্ধ

থাকায় বোরো ধান আবাদে ব্যাহত হতে পারে। ১৫ জানুয়ারি সেচ প্রকল্পের আওতায় খালে পানি সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু গতকাল বুধবার পর্যন্ত খাল পানিশূন্য ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রধান পাম্পহাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এ ছাড়া ভেড়ামারায় প্রধান খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে মাটি ফেলে খালের অনেকাংশে ভরাট করে রাখা হয়েছে। এসব কারণে নির্দিষ্ট সময়ে খালে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ভেড়ামারা প্রধান পাম্পহাউস সূত্রে আরও জানা যায়, বছরের ১০ মাস (১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত) দিনরাত ২৪ ঘণ্টা তিনটি পাম্পের মাধ্যমে পানি তোলা হয়। বাকি দুই মাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়। পাম্প দিয়ে ওঠানো পানি ৪ জেলায় ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখাখাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার প্রশাখা খালে যায়। জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান এবং শাখাখালগুলোতে পানি থাকলে সেচসুবিধাসহ আশপাশের টিউবওয়েল ও পুকুরে পানি স্বাভাবিক থাকে। পদ্মায় পানির স্তর স্বাভাবিক থাকলে প্রতি পাম্পে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ২৮ হাজার ৩১৬ দশমিক ৮৫ লিটার পানি সরবরাহ হয়ে থাকে।

পদ্মায় বর্তমানে পানির স্তর রয়েছে ৪ দশমিক ৫ মিটার। এই পর্যায়কে রিডিউসড লেভেল (আরএল) বলা হয়; অর্থাৎ স্বাভাবিক পর্যায়ে এই স্তরে পানি থাকলে পাম্প চালানো যায়। কিন্তু এই লেভেলে চালালে পাম্প কত দিন পানি সরবরাহ করতে পারবে, তার নিশ্চয়তা নেই।

পাম্পহাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, পানির স্তর ৪ দশমিক ৫ মিটারের নিচে নামলেই পাম্প মেশিনের কয়েল ও বিয়ারিংয়ের তাপমাত্রা বাড়ে। শব্দ ও ঝাঁকুনি হয়। বর্তমানে তিনটি পাম্পের মধ্যে একটি পাম্প সচল রয়েছে। একটি পাম্প একেবারে নষ্ট। আরেকটি নষ্ট পাম্প মেরামত করা হচ্ছে।

কৃষকেরা বলছেন, জিকে সেচখালের পানি দিয়ে ধানের আবাদ করতে যেখানে খরচ হয় ৩০০ টাকা, সেখানে ডিজেলচালিত পাম্পের পানি দিয়ে আবাদ করতে লাগছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগে। তা ছাড়া জিকে খালের পানিতে ধানের ফলনও বেশি হয়। তাই ভরা মৌসুমে দ্রুত জিকে প্রকল্পের পানি সরবরাহের দাবি জানান তাঁরা।

এই বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জায়গায় সেচের পানি প্রয়োজন। তা ছাড়া আগামী ১০ থেকে ১২ দিন পুরোদমে বোরো আবাদে কৃষকদের প্রচুর সেচের পানি প্রয়োজন। এখনই যদি খালে পানি না যায়, তবে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।