কাশবনের হাতছানিতে ব্রহ্মপুত্রের তীরে ভিড়

জামালপুরের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কাশবন দেখতে যাওয়া লোকজন। মঙ্গলবার বিকেলে জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

চারদিকে জেগে ওঠা ব্রহ্মপুত্র নদের বালুচর। এর মাঝখানে স্বচ্ছ পানির আধার। ওপরে নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ। আর চরজুড়ে শুভ্র কাশফুল। প্রকৃতির দানেই তৈরি হয়েছে এ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। বাতাসে দুলতে থাকা কাশফুলের এ সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের মনে দেয় একধরনের প্রশান্তি। তাই প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করছেন এখানে।

এ অপার সৌন্দর্যের দেখা মিলবে জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নদের ধারে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষের। সবাই নিজেদের মতো করে ছবি তুলছেন, কেউবা কাশফুল ছিঁড়ে তৈরি করছেন তোড়া।

গত মঙ্গলবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, শহরের মোড় থেকে শুরু করে নদের তীর পর্যন্ত মানুষের ভিড়। ছোট্ট একটি সেতু পার হয়ে সবাই ছুটছেন নদীর ধারে। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে ফুটেছে কাশফুল। সবুজ লম্বা পাতার বুক থেকে বেরিয়ে আসা শুভ্র কাশফুল কোথাও থোকা থোকা, কোথাও গুচ্ছ আকারে। দূর থেকে মনে হবে, বালুচরে যেন সাদা চাদর বিছানো। হাওয়ায় দুলে ওঠা কাশফুলে মন ভরে যাচ্ছে দর্শনার্থীদের।
চরের যে অংশে কাশবনের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে জনবসতি নেই। আছে স্বচ্ছ পানির লেকের মতো একটি ডোবা। কাশফুলঘেরা সেই পানিতে ডিঙিনৌকা নিয়ে ঘুরছেন দর্শনার্থীরা। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা সন্তানদের নিয়ে খেলায় মেতে উঠেছেন।

ব্রহ্মপুত্র নদের চরের যে অংশে কাশবনের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে জনবসতি নেই। আছে স্বচ্ছ পানির লেকের মতো একটি ডোবা
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় লোকজন জানান, ফৌজদারি এলাকার ব্রহ্মপুত্রের এ অংশে আগের মতো প্রবল পানিপ্রবাহ নেই। ফলে নদের তীরে সৃষ্টি হয়েছে বালুচর। ভাদ্র মাসের শেষদিকে কাশফুল ফুটতে শুরু করে, কার্তিক পর্যন্ত থাকে। এ সময়ে পুরো এলাকা শুভ্র কাশফুলে সেজে ওঠে। তখনই এখানে প্রতিদিন বিকেলে বসে একধরনের গ্রামীণ মেলা। ফুচকা, চটপটি, খেলনা ও বিভিন্ন খাবারের দোকান বসে। ভিড় জমে এসব দোকানেও।

মুকুন্দবাড়ি এলাকার ফিরোজ মিয়া মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন কাশবনে। তিনি বলেন, ‘সত্যিই জায়গাটি অনেক সুন্দর লাগছে। চারদিকে সাদা কাশফুল, আবার ফুলের মাঝখানে স্বচ্ছ পানির লেক—অসাধারণ এক দৃশ্য। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মেয়েকে নিয়ে এসেছি। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও মেয়ে যেতে চাইছে না।’

প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নদের ধারে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। সবাই নিজেদের মতো করে ছবি তুলছেন। মঙ্গলবার বিকেলে জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সন্ধ্যার আলোয় নদীর ধারের পুরো চর সাদা কাশফুলে ঝলমল করে উঠেছিল। দর্শনার্থীরা তখন ছবি তুলতে ব্যস্ত। কেউ মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করছেন, কেউবা ফুল ছিঁড়ে নিচ্ছেন। ১১ বছর বয়সী মাহিন বাবার কাছে বায়না ধরেছিল ফুল ছিঁড়ে দেওয়ার জন্য। বাবা আশিকুর রহমান কাশফুল হাতে তুলে দিতেই সে খুশিতে আত্মহারা। আশিকুর রহমান বলেন, ‘এমনিতেই এই তীরের পরিবেশ মুগ্ধ হওয়ার মতো। তার ওপর একসঙ্গে এত কাশফুল সত্যিই মন শান্ত করে দেয়। ভালো লাগায় পরিবার নিয়ে প্রায়ই চলে আসি।’

শহরের ইকবালপুর এলাকা থেকে ঘুরতে এসেছেন সুজন মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শহরে মানুষের ঘুরতে যাওয়ার জায়গা নেই বললেই চলে। তাই সবাই চিরচেনা কাশফুল দেখতেই নদের ধারে ভিড় করছেন। তিনিও তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে এসেছেন। একসঙ্গে কাশবনের ভেতরে ঢুকে ছবি তুলছিলেন তাঁরা।

ফৌজদারি এলাকার ব্রহ্মপুত্রের এ অংশে আগের মতো প্রবল পানিপ্রবাহ নেই। ফলে নদের তীরে সৃষ্টি হয়েছে বালুচর। ভাদ্র মাসের শেষদিকে কাশফুল ফুটতে শুরু করে, কার্তিক পর্যন্ত থাকে
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুর সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘যেমনটি ভেবেছিলাম, এসে দেখি তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। অনেক দূর পর্যন্ত কাশফুল ছড়িয়ে আছে। ফুচকা-চটপটিসহ দোকান বসেছে। সব মিলিয়ে যেন এক গ্রামীণ মেলা। সত্যিই এক অসাধারণ সময় কাটালাম।’

ফৌজদারি এলাকার বাসিন্দা আসিফ মাহমুদ জানান, এক-দুই বছর ধরে এখানে কাশফুল ফুটছে। বিকেল হলেই বিপুলসংখ্যক মানুষ আসেন। ছবি তোলেন, ভিডিও করেন। ছুটির দিনে ভিড় আরও বেড়ে যায়।

শহরের কম্পপুর এলাকা থেকে এসেছেন দুই তরুণ-তরুণী। তাঁদের ভাষ্য, শুধু কাশফুলের টানেই ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ঘুরতে এসেছিলেন। এত কাশফুল একসঙ্গে কখনো দেখেননি। কাশবনে দাঁড়িয়ে অনেক ছবি তুলেছেন তাঁরা। বিকেলটা সত্যিই তাঁদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।