১৯ হাজার টাকায় কেনা হয় একটি বালিশ

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ইউনিটের ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা জেলা রেড ক্রিসেন্ট প্রাঙ্গণেছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরের জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতাল পরিচালনায় গত ১৩ বছরে ৪৮ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরে বর্তমান পরিচালনা কমিটি। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট হাসপাতালটি পরিচালনা করে।

এতে উল্লেখ করা হয়, কেনাকাটার হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিগত সময়ে একটি বালিশ কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ১৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। বেডশিট, দরজা–জানালা, বালিশ–ফোম, ম্যাট্রেস ইত্যাদি খাতে প্রতিবছর ৩০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। অথচ এখন এ খাতে প্রতিবছর খরচ হচ্ছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন। রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সোসাইটির নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান, সদস্য ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ১৩ বছর যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। লোক নিয়োগ থেকে শুরু করে কেনাকাটা সর্বক্ষেত্রে অনিয়ম দেখা গেছে। তাঁর নেতৃত্বে নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর হাসপাতালটির লাভের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি খরচও কমে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি।

আগের কমিটি ২০১০–এর শুরু থেকে ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত টানা ১৩ বছর দায়িত্ব পালন করে। এক প্রশ্নের জবাবে পেয়ারুল বলেন, ১৩ বছরই ভাইস চেয়ারম্যান শেখ শফিউল আজম দায়িত্ব পালন করেছেন। চেয়ারম্যান থাকলেও মূলত হাসপাতাল পরিচালনা করতেন শফিউল আজম। ওই সময়ে চেয়ারম্যান ছিলেন জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান এম এ সালাম।

পেয়ারুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতিতে ডুবন্ত ও লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হওয়া জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালকে দুর্নীতিমুক্ত করে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে আয় বাড়ানো হয়েছে। বিগত এক বছরে সেই আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০ শতাংশ। এসব সম্ভব হয়েছে হাসপাতালের লুটপাট বন্ধ করে প্রতিটি বিভাগে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে পারায়।

জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতাল
ছবি: সংগৃহীত

লিখিত বক্তব্যে পেয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, সনদ জালিয়াতি করে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ও অন্যান্য অনিয়মে যুক্ত আটজন কর্মচারীকে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চাকুরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পেয়ারুল বলেন, হাসপাতালে আগে প্রতি মাসে ৫৫ লাখ টাকা আয় হলেও বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই আয় মাসে এখন ১ কোটি ৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এক বছর আগে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার সময় হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আট মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া ছিল। আগের কমিটির সেই আট মাসের বকেয়া থেকে ইতিমধ্যে নিয়মিত বেতন–ভাতা প্রদানের পাশাপাশি বকেয়া ছয় মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।

পেয়ারুল আগের দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বেডশিট, পর্দা কেনার ভাউচারগুলো যাচাই করি। ভাউচারে থাকা দোকানের অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাইনি। হিসাব করে দেখেছি, বিগত বছরগুলোতে একটি বেডশিট, পর্দা বা বালিশের দাম ১৯ হাজার টাকার মতো পড়েছে।’

পেয়ারুল আরও বলেন, স্যানিটারি, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য মেরামতের নামে প্রতিবছর খরচ হতো ৯০ লাখ টাকা। এখন এ খাতে প্রতিবছর ব্যয় হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। জ্বালানি খাতে প্রতিবছর গড়ে ২৫ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়। অথচ গত এক বছরে এই খাতে ব্যয় হয় মাত্র চার লাখ টাকা। গ্লাভস কটন থানগজ ইত্যাদি খাতে প্রতিবছর ৫০ লাখ টাকা খরচ হতো। এখন হয় ১০ লাখ টাকা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানার জন্য সোসাইটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ শফিউল আজমকে ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। কথা হয় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে গত সাত বছর দায়িত্ব পালন করা বেদারুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে সোসাইটি ও হাসপাতাল পরিচালনায় অনিয়মের যেসব অভিযোগ রয়েছে, তার একটা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার। তাতে যাঁরা দোষী হবেন, তাঁদের শাস্তি হওয়া দরকার। সেটা আমি হলে আমারও। প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।’