নাচোলের আলপনা গ্রাম
নতুনভাবে আঁকা আলপনায় দুর্গোৎসবের আমেজ
গ্রামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আলপনা বাড়ি দেখন বর্মণের। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে এই বাড়ি দেখতে।
আলপনা গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পাওয়া নাচোলের টিকইলে দুর্গাপূজা উপলক্ষে সবার বাড়িতেই নতুনভাবে আলপনা আঁকা হয়েছে। আলপনার এই নতুন সাজ উৎসবের আমেজ এনেছে গ্রামজুড়ে।
গত রোববার বিকেলে দেখন বর্মণের মেয়ে অনিতা বর্মণের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তুলসীতলায় ও তুলসীবেদিতে সাদা খড়িমাটির রঙে আলপনা আঁকছেন তিনি। এর আগে তিনি গোটা বাড়ির দেয়ালচিত্র নতুন রঙে রাঙিয়েছেন। বাড়িতে ঢুকেই বোঝা যায় উৎসবের আমেজ।
অনিতা বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে তুলসীতলা, তুলসীবেদি, আঙিনা ও বারান্দায় আঁকা হচ্ছে পুরোনো ঐতিহ্যের আলপনা। তবে বাড়ির বিভিন্ন দেয়ালে আগে থেকেই আঁকা নানা ফুল-পাখির চিত্রে নতুন করে রং চড়ানো হয়েছে।
পূজা উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন বেড়াতে আসে। দূরদূরান্ত থেকে আসে দর্শনার্থীরাও। তাঁরা দেখে মুগ্ধ হন, উচ্ছ্বাসিত হয়ে প্রশংসা করেন। তখন খুব ভালো লাগে। তবে এসব নিজের মনের আনন্দেই করা। মনের রঙেই এসব রাঙানো হয়। ঝকঝকে তকতকে দেয়ালে আলপনার রং দেখে মনটা প্রফুল্ল থাকে। তখন কষ্ট করে আঁকা সার্থক মনে হয়। তিনি জানান, মা দেখন বর্মণের কাছেই শিখেছেন এসব। শিখিয়েছেন মেয়ে রিমা বর্মণকে।
আলপনা গ্রামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আলপনা বাড়িটি হচ্ছে দেখন বর্মণের। প্রায় সারা বছরই দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে এই বাড়িতে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে এই বাড়ি দেখতে। এ বাড়িতে গেলে যে কারও মনে হবে দেখার মতোই বাড়ি এটা। আলপনা আঁকার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি তিনি পেয়েছেন জাতীয় শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার। পুরস্কার হিসেবে তাঁকে দেওয়া হয়েছে স্বর্ণপদকসহ ৯০ হাজার টাকা।
দেখন বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ আলপনা গ্রাম দেখতে আসে। তাঁর বাড়ি ও পাশে তাঁর মেয়ের বাড়িটির প্রতিই আকর্ষণ বেশি মানুষের। বাড়ি দেখতে মানুষের ভিড়ে প্রথম দিকে বিরক্তই লাগত। তবে এখন ভালোই লাগে। মানুষ দেখে মুগ্ধ হয় ও প্রশংসা করে। তখন আমাদের মনেও তৃপ্তি আসে। আসলে দেখার জন্যই তো এসব।’
দেখন বর্মণ জানান, ৪৬ বছর আগে এ বাড়ির বউ হয়ে আসার পর থেকেই তিনি আলপনা এঁকে চলেছেন। দুই মেয়ে ও নাতনিদের আঁকা শিখিয়েছেন। চলবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। এই গ্রামের বউ-ঝিরা কেবল পূজা–পার্বণের সময় প্রচলিত কিছু আলপনা আঁকত। তাঁর দেখাদেখি এখন অনেকে প্রচলিত আলপনার পাশাপাশি মাটির দেয়ালে নানা রকম ফুলের আলপনা এঁকে চোখজুড়ানো সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। তিনি এসবের পাশাপাশি দেয়ালচিত্রে ফুটিয়ে তোলেন গ্রামীণ জীবন।
তিনি আরও জানান, তাঁর বাড়ির দেয়ালের আঁকা আলপনার চিত্র নিয়ে একবার প্রথম আলো বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডার করেছে। প্রতিবেদন করেছে একাধিকবার। প্রথম আলোর মাধ্যমেই ছড়িয়েছে এ গ্রামের আলপনার সুখ্যাতি। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে রাস্তার পাশের মাটির দেয়ালগুলোতে আঁকা আলপনা। দেখেই বোঝা যায়, নতুনভাবে আঁকা হয়েছে দুর্গাপূজা উপলক্ষে।