সীতাকুণ্ডে কারখানায় বিস্ফোরণের পর চার দিন ধরে বিদ্যুৎহীন ২০০ পরিবার

সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সঞ্চালন লাইনগুলো সচল করার জন্য কাজ শুরু করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানায় বিস্ফোরণের পর প্রায় চার দিন কেটে গেছে। তবে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০০ পরিবার এখনো বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ফলে এসব পরিবারে বিশুদ্ধ পানি ও নিত্যব্যবহারের জন্য পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার ১১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে এখনো বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ আছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, আজ সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনগুলো সচল করার জন্য কাজ শুরু করেছে। বিস্ফোরণের পর ওই এলাকায় ৪০০ পরিবার বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছিল। বিকল্প পদ্ধতিতে এর মধ্যে ২০০ পরিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। তবে অবশিষ্ট ২০০ পরিবার ও ১১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন এখনো বন্ধ। তবে আবাসিক লাইনগুলো দ্রুত মেরামতের জন্য গতকাল রাতে ঢাকা থেকে ১৫ লাখ টাকার বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সীতাকুণ্ডে আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন

আজ সকালে কারখানা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুতের খুঁটিগুলোয় বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন কাজ করছেন। সেখানে এসব কাজ দেখভাল করছিলেন ঠিকাদারের প্রতিনিধি মো. বায়েজিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ১০ জন মিলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন মেরামত করার কাজ করছেন। নষ্ট হওয়া বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলো পরিবর্তন করে নতুন করে লাগানো হচ্ছে। সকাল থেকেই তাঁরা কাজ শুরু করেছেন।

বিস্ফোরণ এলাকার ১০০ মিটারের মধ্যে একটি চারতলা আবাসিক ভবনের চারতলার বাসিন্দা কোহিনুর বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের পর থেকে তাঁদের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। এ জন্য পানির মোটরও চালাতে পারছেন না। রেফ্রিজারেটরের অনেক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁদের বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটি পুকুর আছে। চতুর্থ তলা থেকে নেমে হেঁটে ওই পুকুর থেকে পানি আনতে হচ্ছে। নিত্যব্যবহারের জন্য এসব পানি ব্যবহার করছেন তাঁরা। কিন্তু পান করার জন্য দোকান থেকে পানি কিনতে হচ্ছে।

দুর্ঘটনার পর থেকে কেশবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। এতে এসব এলাকায় পানের জন্য বিশুদ্ধ পানির হাহাকার পড়ে গেছে
ছবি: প্রথম আলো

সকাল ১০টার দিকে একটি বালতি করে পানি নিয়ে যাচ্ছিলেন নাসির নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা। তিনি প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনছেন বলে জানা গেল। নাসিম বলেন, দুর্ঘটনার পর তাঁদের দুর্ভোগের শেষ নেই। পানির জন্য তিনি কখনো এমন কষ্টে পড়েননি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পুরো এলাকায় পানের জন্য বিশুদ্ধ পানির হাহাকার পড়ে গেছে। বেশির ভাগ ভবনে বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে পানি তোলা হয়। তবে চার দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। গোসল ও নিত্যব্যবহারের জন্য পরিবারের পুরুষ সদস্যরা অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে আনছেন। তবে পুকুর বা বিভিন্ন জলাশয়ের এসব পানি পানের উপযোগী নয়।

ফৌজদারহাট বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ কাউছার মাসুম প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার পর ওই অক্সিজেন কারখানার আশপাশে পাঁচটি কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন

সেখানে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের বৈদ্যুতিক সিস্টেমও নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ওই লাইনের অধীনে আরও ছয়টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। অবশ্য এসব প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎলাইন সচল হলেও ফায়ার সার্ভিসের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হবে না। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের মনোযোগের বিষয় হলো, আবাসিক এলাকায় কীভাবে দ্রুত বিদ্যুৎ দেওয়া যায়। আজ শবে বরাতের রাত। পবিত্র এই রাতের কথা বিবেচনা করে তাঁরা আজ দিনব্যাপী কাজ করে লাইন সচল করার চেষ্টা করবেন।

গত শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সীমা অক্সিজেন কারখানায় কলাম বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা কোন পর্যায়ে রয়েছে, কোন কোন প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, সেটি খুঁজে বের করতে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করে।