রংপুরে জাপার নেতা-কর্মীরা আবারও হতাশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভরাডুবির পর দলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ ঢাকার বনানী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ ছাড়া গতকাল রোববার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাপার পরাজিত কয়েকজন প্রার্থীর নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের মতবিনিময় সভায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে রংপুর অঞ্চলের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

আরও পড়ুন

জাপার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, রংপুর অঞ্চল জাপার দুর্গ বলে পরিচিত। নির্বাচনে ভরাডুবির পর রংপুর অঞ্চলের নেতা-কর্মীরা চিন্তিত হলেও এখনো কোনো সভা আহ্বান করা হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চাঙা হয়ে উঠেছিলেন, আবার ঝিমিয়ে পড়ছেন তাঁরা। তবে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর ওপরই আস্থা রাখছেন তাঁরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রংপুর জেলা জাপার এক শীর্ষ নেতা বলেন, রংপুর বিভাগে সমঝোতার নয়টি আসনের ছয়টিতেই দলের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীরা স্থবির হয়েছে পড়েছেন। তাঁরা চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় একটি পক্ষের বিক্ষোভ ও পৃথক কর্মসূচি পালনও দলের নেতা-কর্মীদের ভাবিয়ে তুলেছে। রংপুর অঞ্চলে দলের রাজনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল হয়নি। এ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের হতাশ হওয়ারই কথা। দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে দোষারোপ করে ঢাকায় একটি পক্ষের বিক্ষোভ করার বিষয়টিতে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। মূলত দলের একটি পক্ষ অতিরিক্ত সুযোগ–সুবিধা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

এবারের নির্বাচনে জাপার প্রার্থী ছিলেন ২৬৫ জন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতা করে মাত্র ১১টিতে জয় পায় জাপা। নির্বাচনে দলটির প্রার্থীদের ৯০ শতাংশই জামানত হারান। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে নয়টি আসনে সমঝোতা করে তিনটি আসনে জয় পায় জাপা। বিজয়ী তিনজন হলেন রংপুর-৩ আসনে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের, কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান ও ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

আসন সমঝোতা হওয়ার পরও জাতীয় পার্টির পরাজয় এবং ঢাকায় একটি পক্ষের অসন্তোষ ও বিক্ষোভের বিষয়টি রংপুরে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের আলোচনায় উঠে আসছে। পাশাপাশি সুধীজনসহ রাজনৈতিক মহলেও তা আলোচিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো ও কার্যক্রম গতিশীল না থাকায় জাতীয় পার্টির এই পরাজয় হয়েছে বলে আমার ধারণা।’

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে জাপার কো–চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটির মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘একটি মহল আমাদের কতিপয় নেতাদের উসকানি দিয়ে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা সফল হতে পারবে না। রংপুর অঞ্চলে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দল এগিয়ে যাবে। এখানে কেউ নাক গলাতে পারবে না।’ তিনি জানান, নির্বাচনে পরাজয়ের পর দলের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও করণীয় নিয়ে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুরে একটি সভা হয়েছে। সেখানে বিভাগের আট জেলার শীর্ষ নেতা, বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন।