অভিনয়শিল্পী থেকে হয়ে উঠলেন ‘হঠাৎ বাবুর্চি’
বাইসাইকেলে লাগানো হয়েছে মোটরসাইকেলের হেডলাইট। আছে মোটরসাইকেলের মতো হর্ন। পেছনে বাঁধা আছে রান্না করার উপকরণ। সাইকেলের মালিকের নাম লুৎফর রহমান। পেশায় তিনি বাবুর্চি। ৭৫ বছর বয়সেও বাবুর্চির কাজ ছাড়েননি। তবে তাঁকে লুৎফর নামে বেশির ভাগ মানুষই চেনেন না। তিনি সবার কাছে পরিচিত ‘হঠাৎ বাবুর্চি’ নামে।
লুৎফর তরুণ বয়সে গ্রামে গ্রামে মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। এক নাটকে লুৎফরের চরিত্রের নাম ছিল ‘হঠাৎ’। সেই থেকে লোকমুখে তাঁর নাম হয়ে ওঠে ‘হঠাৎ’। পরে নাটকের মঞ্চ ছেড়ে হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর বাবুর্চি। ৪০ বছর ধরে তিনি সেই পেশাতেই আছেন। এখন তাঁর নাম হয়েছে ‘হঠাৎ বাবুর্চি’।
লুৎফরের বাড়ি রংপুর নগরের শহরতলী তপোধনের চওড়াহাট এলাকায়। পাঁচ ছেলেমেয়ের সবাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। স্ত্রীকে নিয়েই এখন লুৎফরের সংসার।
হঠাৎ বাবুর্চির সঙ্গে দেখা হলো রংপুর নগরের বুড়াইল হাট এলাকার একটি সড়কে। তিনি তাঁর অভিনব সাইকেল নিয়ে ছুটে যাচ্ছিলেন কাজে। তবে সাইকেল থামিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আলাপ করলেন। জানালেন, তাঁর শখ ছিল পুরোনো সাইকেল বাদ দিয়ে একটি মোটরসাইকেল কিনবেন। তাঁর সাধ আছে, সাধ্য নেই। তাই সাইকেলেই মোটরসাইকেলের হেডলাইট ও হর্ন লাগিয়েছেন। সাইকেলের পেছনে ছোট বাক্সের মধ্যে ব্যাটারিও আছে। এতে সাইকেলে আর প্যাডেল মারতে হয় না।
স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সাইকেলটি চলতে থাকে। মোটরসাইকেল মেরামতের একটি দোকান থেকে লুৎফর এসব যন্ত্রাংশ কিনছিলেন। সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে ১৫০০ টাকা।
লুৎফর বলেন, তাঁর সাইকেলের পেছনে বেশির ভাগ সময় রান্নার উপকরণ বাঁধা থাকে। তবে সাইকেলে এসব যন্ত্রাংশ লাগানোর পর থেকে তাঁর কষ্ট কমে গেছে। আশপাশের লোকজনও বেশ আগ্রহ নিয়ে সাইকেলটি দেখতে আসেন। মানুষজন তাঁকে দেখলেই বলেন, ‘ওই দেখো, হঠাৎ বাবুর্চি যায়।’
বাবুর্চি পেশার আগে লুৎফর ফসলের খেতে দিনমজুরির কাজ করতেন। তবে এই পেশায় তাঁর মন বসত না। রান্নার প্রতি একধরনের ঝোঁক ছিল। তাই মাঝেমধ্যে প্রতিবেশীদের বাড়িতে ছোটখাটো অনুষ্ঠানে রান্নার ফরমায়েশ নিতেন। ধীরে ধীরে লুৎফরের রান্নার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে। তখন থেকে বাবুর্চি পেশায় থিতু হন তিনি।
এই পেশায় যা রোজগার হয় তাতেই খুশি হঠাৎ বাবুর্চি ওরফে লুৎফর। এভাবেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান তিনি। লুৎফর বলেন, প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার মতো আয় হয়। এটা দিয়ে সংসার ভালোই কেটে যায়। না চাইলেও রান্না করা খাবার মেলে। কারও কাছে হাত পাততে হয়নি। নিজের কাজ নিজেই করে যাচ্ছি। এই জীবনে মানুষজনের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। ছেলেমেয়েরাও ভালো আছে।’
তপোধন এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এলাকায় তাঁকে সবাই হঠাৎ বাবুর্চি নামেই চেনেন। তাঁর আসল নাম হয়তো অধিকাংশ মানুষই বলতে পারবেন না। তার ওপর তিনি সাইকেলটি বানিয়েছেন মোটরসাইকেলের আদলে। এই বয়সেও তিনি তাঁর নিজে কর্ম করে যাচ্ছেন। সব সময় আনন্দে থাকার চেষ্টা করেন।