‘সারা রাইত গরু পাহারা দিয়া দিনে খেতে কাম করি’
‘আমরা ঘুমাইতে পারি না। ঘুমাইলেই গরু চুরি হয়। সারা রাত গরু পাহারা দিয়া দিনে খেতে কাম করি। এমনেই দিন যাইতাছে আমাদের।’ গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাবুর গ্রামের প্রান্তিক চাষি নজরুল ইসলাম কথাগুলো বলেন। আজ শনিবার দুপুরে গরু চুরি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধনে আরও অনেক খামারির সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, গত এক মাসে পাবুর গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ৬৫টি গরু চুরি হয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ চত্বরে আজ দুপুরে কাপাসিয়ার ডেইরি খামারিদের আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত শতাধিক কৃষক ও স্থানীয় খামারি ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এতে অংশ নেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অন্তত ১০ কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসে রায়েদ ইউনিয়নের বাঘিয়া গ্রামে ১০টি, চিনাডুলি গ্রামে ১২টি, মধ্যপাড়া গ্রামে ৮টি, হাইলজুড় গ্রামে ৫টি গরু চুরি হয়েছে। এ ছাড়া কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রাম, দুর্গাপুর ইউনিয়নের রাউনাট, দুর্গাপুর, নাসেরা, ফুলবাড়িয়া, বেগুনহাটি, নওগাঁ, বর্জনাসহ বিভিন্ন গ্রামের আরও ২০ থেকে ২৫টি গরু চুরি হয়েছে।
পাবুর গ্রাম থেকে এসে গরু চুরি বন্ধের দাবিতে হাতে ব্যানার নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফালানি বেগম। স্বামী মারা যাওয়ার পর গরু-ছাগল পালন করে তাঁর সংসার চলে। তাঁর শেষ সম্বল তিনটি গরু নিয়ে তিনি আছেন চরম শঙ্কায়। সারা রাত ধরে গরু পাহারা দেন তিনি। পরদিন ঘুম ঘুম চোখে সংসারের সব কাজ করতে হয় তাঁকে। ফালানি বেগম বলেন, গরু চুরি বন্ধে পুলিশের তৎপর হওয়া দরকার।
একই গ্রামের ইউসুফ মিয়া বলেন, তাঁর দুটি গরু তিনি ভোর পাঁচটা পর্যন্ত সজাগ থেকে পাহারা দেন। আশপাশে চুরি বেড়ে যাওয়ায় তাঁর এই সতর্কতা। তিনি এই আতঙ্ক থেকে পরিত্রাণ চান। নিজেদের পাহারার পাশাপাশি পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেন তিনি।
দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. উজ্জ্বল মিয়া বলেন, তাঁরা সব সময় গরু চুরির আতঙ্কে থাকেন। রাতে নিজেদের গরু পাহারা দিচ্ছেন নিজ উদ্যোগে। পুলিশের টহল বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
বেগুনহাটি গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আজকাল গরু চুরি অনেক বেশি বেড়ে গেছে। সারা রাত পাহারা দিয়েও গরু রক্ষা করা যাচ্ছে না।
গত ১৫ নভেম্বর বাঘিয়া ও চিনাডুলি গ্রামে এক রাতে ৫ কৃষকের ১২টি গরু চুরি ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে তিনটি গরু ছিল ওই গ্রামের মিলন হোসেনের। মিলন হোসেন বলেন, কাপাসিয়া উপজেলায় গরু চুরি যে হারে বাড়ছে, তাতে কৃষকদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। একদিকে পাহারা বসালে, অন্যদিকে গরু চুরি হয়ে যায়।
গত ৬ নভেম্বর পাবুর গ্রামের সাইদুর রহমানের ২ লাখ টাকা দামের ২টি গরু চুরি হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার গরু চুরি হইছে। পুলিশকে জানাইনি। জানাইলে আর কী হবে? খবর দিলেও পুলিশ যায় না। আমরা অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি।’
গত শুক্রবার রাতে পাবুর গ্রামের সুজা উদ্দিনের বাড়ি থেকে ২টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তাঁর প্রতিবেশী আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, সুজা উদ্দিনের গরু চুরির ঘটনার পর তিনি তাঁর ১২টি গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। আজ থেকে গরু পাহারায় তিনি পরিবারের আরও এক সদস্যকে নিয়ে রাত জাগবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাপাসিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাবুর গ্রামসহ কাপাসিয়ার বিভিন্ন এলাকায় গরু চুরি হয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থাও নিচ্ছে। শীতকালে চুরির ঘটনাগুলো বেশি ঘটে। তাই আমরা স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাত্রিকালীন পাহারা জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছি। গরু চুরি রোধে নজরদারি বাড়ানো হবে।’