রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দাম কমানোসহ ৫ দাবিতে মানববন্ধন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মান বৃদ্ধিসহ পাঁচ দফা দাবিতে মানববন্ধন। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের বর্ধিত মূল্য কমানো, আবাসিক হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান বৃদ্ধিসহ পাঁচ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন থেকে দাবি আদায় না হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

এর আগে গত রোববার একই দাবিতে ১৭টি হলের খাবার প্রদর্শন করে খাবারের পুষ্টিমান যাচাই করতে উপাচার্যকে আহ্বান জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়া গতকাল সোমবার একটি গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে তাঁদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শতাধিক শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেন।

শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো ক্যাফেটেরিয়ায় পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করা, হলের ডাইনিং ও ক্যাফেটেরিয়ার খাবারে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দেওয়া এবং বাণিজ্যিক কাজে ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবহার বন্ধ করা।

মানববন্ধনে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, গতকাল সহ–উপাচার্য বলেছেন, ‘ক্যাফেটেরিয়া ও ডাইনিংয়ের খাবারে বরাদ্দ দিতে ইউজিসির অনুমোদন নেই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে তো রাকসুর (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) অনুমোদন আছে, তাহলে ৩০ বছর ধরে এটি বন্ধ আছে কেন? শিক্ষার্থীদের খাবারের মান বাড়ালে সেখানে লুটপাটের সুযোগ থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলে মাসে অন্তত ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিলেও বছরে ২ কোটি টাকার বেশি হবে না। অথচ এ বছর প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। তারা এই টাকা দিয়ে যত্রতত্র ভবন তুলে আয়ের পথ তৈরি করছে। হলের খাবার খেয়ে যেকোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে হল ও ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের বর্ধিত মূল্য কমিয়ে মান বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানান।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, ক্যাফেটেরিয়ায় শিক্ষার্থীদের স্বল্প মূল্যে খাবার পরিবেশন করার কথা। কিন্তু প্রশাসন আজ ক্যাফেটেরিয়াতে বিয়ে ও জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেটিকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। তাদের ব্যবসা ও বিলাসিতার ক্ষেত্রে ইউজিসির বরাদ্দ থাকে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার খাবারের জন্য কোনো বরাদ্দ করা হয় না।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, ডাইনিং ও ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম ঠিকই বেড়েছে কিন্তু মান বাড়েনি। সাধারণ খাবারও পর্যাপ্ত থাকে না। যাঁরা আগে যান, তাঁরাই খাবার পান। পরে বিশেষ খাবার চড়া দামে কিনতে হয়, যা শিক্ষার্থীর নাগালের বাইরে। গত বছর প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিয়ে দাম বাড়ানোর আলোচনা করেছিল। এবার ভর্তি পরীক্ষার সময় কোনো আলোচনা ছাড়াই রাতারাতি দাম বাড়ানো হয়েছে।

শাকিলা খাতুন আরও বলেন, ‘আমাদের সেমিনার-লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই থাকে না, আমরা লাইব্রেরিতে গরমে পড়াশোনা করতে পারি না। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন করে এসি (এয়ারকন্ডিশনার) লাগানো হয়েছে। এর ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ টাকা। প্রশাসন কাদের উদ্দেশ্যে এই মিলনায়তন নির্মাণ করেছে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা করেছে, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য। তিনি প্রশাসনকে অবিলম্বে এসব বন্ধ করতে এবং হলের ডাইনিং-ক্যানটিনে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দেওয়ার আহ্বান জানান।

মানববন্ধনে প্রগতিশীল দুই ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। মানববন্ধনে তাঁরা তাঁদের দাবিসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।