কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তের জের ধরে অস্থিরতা বিরাজ করায় ‘রাজনীতিমুক্ত’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ছাত্রদের এবং আগামীকাল সোমবার সকাল নয়টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ছাড়া অন্য পরিবহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি ভার্চুয়াল সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার মধ্যরাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার বিকেল তিনটায় একটি পক্ষ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অভিনন্দন জানিয়ে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল ও মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। রামদা, লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে দুই পক্ষ ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সোমবার সকাল নয়টার দিকে উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের সভাপতিত্বে এক জরুরি ভার্চুয়াল সভা হয়।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, কোষাধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, পাঁচটি হলের প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা যুক্ত ছিলেন। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত আটজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির পর পদ হারানো এক নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাশ ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে পদ প্রত্যাশীরা নিজেদের আধিপত্য ফিরে পেতে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হল বন্ধ করে দেওয়াসহ নানা সিদ্ধান্ত নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা, সাপ্তাহিক ছুটি, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি চলছে। ১০ অক্টোবর থেকে ক্যাম্পাস খুলবে।’

২০০৭ সালের ২৮ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতিমুক্ত। প্রতি বছর ভর্তির সময় শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ধূমপান করবে না বলে অঙ্গীকারনামা দিয়ে ভর্তি হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে ছাত্ররাজনীতি শুরু করে। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই রাতে মো. খালিদ ছাইফুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

২০১৭ সালের ২৮ মে সভাপতি পদে মো. ইলিয়াস মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে রেজাউল ইসলাম মাজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আংশিক কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর ১৬১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। তাদের পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও ছাত্রত্ব নেই। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছেন। এক বছর মেয়াদি ওই কমিটির মেয়াদ ২০১৮ সালেই শেষ হয়।