টঙ্গীর রাসায়নিক গুদাম নির্মাণকাজে ঢিলেমি

রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের বর্তমান চিত্র। গতকাল গাজীপুরের টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পরিকল্পনা ছিল ঢাকার অনেক রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে আনা হবে গাজীপুরের টঙ্গীতে। ব্যবসায়ীরাও সহজে রাসায়নিক দ্রব্য পৌঁছে দিতে পারবেন টঙ্গী, গাজীপুর, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকায়। এই উদ্দেশেই টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায় নেওয়া হয় অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ প্রকল্প। ২০২০ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে ওই বছরের ডিসেম্বর থেকেই গুদামগুলো স্থানান্তরের কথা ছিল। কিন্তু স্থানান্তর তো দূরের কথা, প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। অগ্রগতি মাত্র ৬০ ভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাসায়নিক গুদামগুলো অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরের জন্য দুটি জায়গা নির্ধারণের কথা জানানো হয় শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে। এর মধ্যে একটি ঢাকার শ্যামপুর ও অন্যটি গাজীপুরের টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায়। ২০২০ সালের ১৬ মার্চ টঙ্গীতে গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

প্রকল্পের অধীন কাঁঠালদিয়া মৌজায় বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল সংস্থার (বিএসইসি) ৬ একর জমিতে ৫৩টি অস্থায়ী গুদাম, এক লাখ গ্যালন ধারণক্ষমতার একটি ওভারহেড, একটি আন্ডারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ও ট্রান্সফরমার স্থাপন করার কথা।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ছয় একর জায়গা সীমানাপ্রাচীরে ঘেরা। ভেতরে ঢিলেঢালাভাবে চলছে কাজ। কোথাও চলছে গুদামের ছাদঢালাই, কোথাও খুঁটির কাজ। গুদামঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে সারিবদ্ধভাবে। এর মধ্যে কোনো গুদামের কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে, কোনোটিতে চলছে শুরুর কাজ।

প্রকল্প পরিচালক খন্দকার জহিরুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৬৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কাগজে-কলমে বলছি ৬০ ভাগ। বাকি ৪০ ভাগ কাজ শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। আশা করছি আগামী বছর জুনের দিকে পুরো প্রকল্প হস্তান্তর করতে পারব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সাবকান্ট্রাক্টর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঠিকমতো কাজ করলে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ মাস। এখানে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের কাজ করতে হচ্ছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক দিয়ে। আমরা ঠিকমতো টাকা পাই না। তাই বেশি শ্রমিক নিয়োগ করতে পারি না। কর্তৃপক্ষের দিক থেকে ঢিলেমি রয়েছে।’

এসব বিষয়ে জহিরুল ইসলাম বলেন, কাজ মোটামুটি ঠিকঠাক এগোচ্ছিল। এর মধ্যে গত বছর জুনে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের পর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করে প্রকল্পে নতুন কিছু বিষয় সংযোজন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। তাই কিছুটা ধীরগতি দেখা দেয়। তা ছাড়া শ্রমিক নিয়োগ বা টাকা পরিশোধের বিষয়টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। বিভিন্ন কারণে তাদের ঢিলেমি থাকতে পারে।