ফ্লাস্কের সঙ্গে বাঁধা দুটি পলিথিন। একটিতে রয়েছে একবার ব্যবহারযোগ্য কিছু প্লাস্টিকের কাপ। অন্যটিতে আদা ও লেবুর টুকরা। ফ্লাস্কটি নিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের মুসলিমাবাদ পয়েন্টে ঘুরছিল ১২ বছরের শিশু জহিরুল ইসলাম। সৈকতে কাউকে দেখলেই জিজ্ঞাসা করছে চা খাবেন কি না। কেউ চা খাচ্ছেন, কেউ আবার ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সৈকতে কথা হয় জহিরুল ইসলামের সঙ্গে। সে জানায়, নোয়াখালীতে বাড়ি হলেও চার বছর ধরে মুসলিমাবাদ এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকছে তার পরিবার। তারা তিন ভাই–বোন মা-বাবার সঙ্গে বাসায় থাকে। ভাই–বোনের মধ্যে সে সবার বড়। বাবা জসিম উদ্দিন রিকশা চালান। বাবার টাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই চা বিক্রি করে পরিবারকে সহায়তা করছে সে।
জহিরুল জানায়, তার বাবা রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করেন। খরচ বাদ দিয়ে ৫০০ টাকার মতো থাকে। প্রতি মাসে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ঘরভাড়া, ভাই–বোনের পড়াশোনার খরচ, পরিবারের খাবারের জোগান, চিকিৎসাসহ সার্বিক খরচ সে আয় দিয়ে মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তাকে দিয়ে চা বিক্রি করানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। প্রায় এক বছর ধরে চা বিক্রি করছে সে।
জহিরুল বলে, ‘মা সকালে চা বানিয়ে ফ্লাস্কভর্তি করে দেয়। সেগুলো বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়েও ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় করে মায়ের হাতে তুলে দিই।’
বাবার আয়ের সঙ্গে তার চা বিক্রির টাকা যোগ হলেও পরিবারের খরচ মেটানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে বলে জানায় সে। জহিরুল বলে, মাছ-মাংস ঘরে রান্না হয় না বললেই চলে। ঘরে মুরগির মাংস রান্না হয়েছে অন্তত এক মাস আগে।
জহিরুল জানায় তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে সে। পরে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তার। সুযোগ পেলে আবারও স্কুলে ভর্তি হতে চায় সে।