জামালপুর রেলস্টেশনে অবস্থান করায় শিক্ষার্থীদের ‘হুমকি’

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে জামালপুর রেলস্টেশনে আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন চার শিক্ষার্থী
ছবি: প্রথম আলো

রেলওয়েতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ, যাত্রী হয়রানি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো জামালপুর রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন চার শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে তাঁরা এই কর্মসূচি শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কর্মসূচি বন্ধ করে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে দিতে টিকিট কালোবাজারিদের পক্ষ থেকে হুমকি পেয়েছেন তাঁরা।

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা দূর করতে ছয় দফা দাবিতে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে ৭ জুলাই থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মহিউদ্দিন রনি। তাঁর সঙ্গে সংহতি জানিয়ে চার শিক্ষার্থী গতকাল সোমবার থেকে জামালপুর রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তাঁরা হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশবিজ্ঞানের (ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, ইসলামপুর সরকারি কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় বোস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. সীমান্ত ও ঢাকার খিলগাঁও মডেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ ভূঁইয়া। তাঁদের চারজনের বাড়ি জামালপুরে।

মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। এ সময় ট্রেনযাত্রীদের ব্যাপক সাড়া তাঁরা পেয়েছেন। বেশির ভাগ মানুষ এই কর্মসূচিকে সমর্থন করছেন। কারণ, বেশির ভাগ যাত্রীই হয়রানির শিকার। ছয় দফা দাবি যাত্রীদের দাবি। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আজ সকালে যখন আমরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করি, ঠিক তখনই কয়েকজন কালোবাজারি এই কর্মসূচি বন্ধ করে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেন আমাদের। আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি। তাঁদের কত বড় সাহস! প্রকাশ্যে তাঁরা হুমকি দেন। তাঁরা এখনো স্টেশন এলাকায় এবং প্ল্যাটফর্মের ভেতরে টিকিট কালোবাজারি করছেন। নিশ্চয় তাঁদের পেছনে বড় কোনো শক্তি কাজ করছে।’

আবদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিউদ্দিন রনির ছয় দফা দাবির সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছেন তাঁরা। রেলওয়ের দুর্নীতি যে শুধু রনির সঙ্গে হয়েছে, এমনটি নয়; প্রতিদিন সারা দেশের বেশির ভাগ যাত্রী এ ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রতিটি স্টেশনে টিকিট কেনা অনেক জটিল এবং কালোবাজারির দৌরাত্ম্য রয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানান।

এই চার শিক্ষার্থীর ছয় দফা দাবির মধ্যে আছে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সহজ ডটকমের যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করা ও হয়রানির ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া; যথোপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে টিকিটের কালোবাজারি প্রতিরোধ; অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লকিং বা বুকিং বন্ধ করা ও অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা; যাত্রীর চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া; ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক-তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক নজরদারি ও শক্তিশালী তথ্য সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বাড়ানো এবং ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।