সৈয়দপুরে রেলের জমি দখল করে দোকান নির্মাণ 

সৈয়দপুরের সাহেবপাড়া ফুলবাগান এলাকার রেলের প্রায় ১৫ শতক জায়গা দখল করা হয়েছে। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে দোকানঘর।

নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলের পানির পাম্পহাউসের জমি দখল করে দোকান নির্মাণপ্রথম আলো

নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে রেলওয়ের একটি পানির পাম্পহাউসের ১৫ শতাংশ জমি দখল করে পাকা দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত ২৮ মার্চ সৈয়দপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের পার্বতীপুর ৮ নম্বর কাছারির মাঠ কানুনগো সাজ্জাদুল ইসলাম।

রেলের জমি দখল করে দোকান নির্মাণের ঘটনায় অভিযুক্ত ওই ব্যবসায়ীর নাম নিয়াজ আহমেদ (বাবলু)। তিনি সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তবে রেলের জমি দখল করার অভিযোগ অস্বীকার করে নিয়াজ আহমেদ বলেন, তিনি রেলের কাছ থেকে ওই জমি ইজারা নিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮৭০ সালে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা স্থাপিত হয়। কারখানা কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য সৈয়দপুরের বিভিন্ন এলাকায় ২ হাজার ৪৮৮টি বাংলো, কোয়ার্টার ও বাসা রয়েছে। ওই সময় রেলওয়ের বাংলো ও কোয়ার্টারে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য ছয়টি পানির পাম্পহাউস নির্মাণ করা হয়। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ওই সব পানির পাম্পহাউস নির্মাণ করা হয়। এখন পানির পাম্পহাউসগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। এসব পানির পাম্পহাউসের জায়গা দখলে নিচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।  

সম্প্রতি শহরের সাহেবপাড়া ফুলবাগান এলাকার পানির পাম্পহাউসের প্রায় ১৫ শতক জায়গায় রাতারাতি টিন দিয়ে ঘিরে অবৈধভাবে দখলে নেন নিয়াজ আহমেদ। এখন তিনি ওই জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ করছেন। এই খবর পেয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (এসএসএই/কার্য) শরিফুল ইসলাম সেখানে যান। তিনি কয়েক দফা গিয়ে কাজ বন্ধ করাসহ সেখানে নির্মিত স্থাপনা ভেঙে দেন। পরে তিনি বিষয়টি রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের পার্বতীপুর ৮ নম্বর কাছারির ফিল্ড কানুনগো সাজ্জাদুল ইসলামকেও লিখিতভাবে বিষয়টি জানান। এরপর তিনি গত ২২ মার্চ সরেজমিনে গিয়ে রেলের জমি দখল করার ঘটনার সত্যতা পান। এ সময় তিনি নির্মাণকাজে বাধা দিয়ে তা বন্ধ করে দেন। তিনি এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

কাজ বন্ধ করে দেওয়া এবং এই বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও নিয়াজ আহমেদ ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পানির পাম্পহাউসের পুরো জায়গার চারদিকে উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন। তিনি সেখানে দোকানঘর তৈরির কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

গত শনিবার (২৭ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, সীমানাপ্রাচীরের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ওই দিন নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও কাজের ব্যবহৃত বিভিন্ন মালামাল সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুচি দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। 

রেলের পাম্পহাউসের জমি দখল করে দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী নিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘রেলওয়ের পানির পাম্পহাউসের জায়গাটি আমার নামে আগে থেকে কৃষি হিসেবে ইজারা নেওয়া ছিল। পরে আমি সেটি বাণিজ্যিক হিসেবে ইজারা নিয়েছি। ইতিমধ্যে ইজারার অর্থও বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যাংকের চালানের মাধ্যমে জমা করেছি।’ তবে পানির পাম্পহাউসের জায়গায় কীভাবে ইজারা নিলেন, এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি। তাঁর কাছে ইজারা নেওয়ার কাগজপত্র দেখতে চাইলে তা–ও দেখাতে পারেননি তিনি। তিনি ইজারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে দুই দিন সময় নিলেও পরে আর যোগাযোগ করেননি।

সৈয়দপুরের রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (এসএসএই/কার্য) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি ভূসম্পত্তি বিভাগের ফিল্ড কানুনগোকে লিখিতভাবে জানানোসহ এ বিষয়ে তাঁকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে রেলের ভূসম্পত্তি বিভাগের পার্বতীপুর ৮ নম্বর কাছারির ফিল্ড কানুনগো সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, সৈয়দপুর শহরের সাহেবপাড়ায় রেলওয়ের পানির পাম্পহাউসের জায়গা কাউকেই কৃষি অথবা বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া হয়নি।