জিংকসমৃদ্ধ নতুন একটি সুগন্ধিযুক্ত ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, এটি সাধারণ জাতের তুলনায় গড়ে ১৫ ভাগ বেশি ফলন দিতে সক্ষম। সাধারণ চালের তুলনায় জিংকের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি থাকায় শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
নতুন এই জাতটির নাম রাখা হয়েছে ‘জিএইউ ধান-৩’। সম্প্রতি জাতীয় বীজ বোর্ড এই জাতের অনুমোদন দিয়েছে। জাতটি ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির ক্ষেত্রে অপরিসীম অবদান রাখবে বলে আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন এই জাত উদ্ভাবনে গবেষণায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন আক্তার আইভী। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এই নতুন জাতটি সুগন্ধিযুক্ত ও জিংকসমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টি ও মানের দিক থেকে অনেক এগিয়ে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধানের মোট উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা দাঁড়াল ৯০টিতে।
গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ চার বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে গবেষণা ও ফলন পরীক্ষা করা হয়। এরপর ২০২১ ও ২০২২ সালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরবর্তী সময়ে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি পরীক্ষায় ফলন সন্তোষজনক পায়। সংস্থাটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড গত ২০ এপ্রিল নতুন এই জাতের ছাড়পত্র দেয়।
চিকন ও লম্বা দানার জাতটি তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পরিপক্ব হবে। আমন মৌসুমে প্রায় তিন মাস এবং বোরো মৌসুমে সাড়ে তিন মাস পর উৎপাদন পাওয়া যায়। যার ফলে অল্প সময়ে অধিক ফলন পেয়ে কৃষকেরা লাভবান হতে পারেন।
গবেষকদের দাবি, নতুন ধানের এই জাতটি মানুষের শরীরকে একদিকে যেমন রোগপ্রতিরোধী করে জীবাণু ও ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরির মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত অ্যামাইলেজ নামক এনজাইমের পরিমাণ শতকরা ২৬ ভাগ, যা শরীরে শর্করাজাতীয় খাবারগুলোকে সহজে ভেঙে শরীরে শক্তি সরবরাহ ও হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। সাধারণ জাতের তুলনায় এটি গড়ে ১৫ ভাগ বেশি ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের ফলন হেক্টরপ্রতি সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় টন।
এ ছাড়া নতুন ধানের গাছের আকার বড়, কাণ্ড মোটা ও কুশির সংখ্যা বেশি। এটি থেকে অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায়। ফলে গবাদিপশুর খাদ্যচাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন আক্তার বলেন, সাধারণ চালের তুলনায় এতে জিংকের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যা শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। সুবাসযুক্ত ধানটি রান্নার সময় মনোহর সুবাস ছড়ায়। ফলে ভোক্তাদের কাছে এর চাহিদা বাড়াবে। জলবায়ু–সহনশীলতা ও পোকা–রোগ প্রতিরোধক্ষমতা রয়েছে। অল্প সময়ে অধিক ফলন পেয়ে কৃষকেরাও লাভবান হবেন।