নেত্রকোনায় ঐতিহ্যবাহী দেউলি উৎসবে হাজংদের মিলনমেলা
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী দেউলি উৎসব। গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী উপজেলার শ্যামনগর গ্রামে বিরিশিরির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির আয়োজনে এই উৎসব হয়।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে বসবাসরত হাজং, গারো, কোচ, বানাই, ডালু, হদি সম্প্রদায়ের সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।
উৎসবের উদ্বোধন করেন হাজং মাতা রাশিমণি কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি ও আদিবাসী গবেষক মতিলাল হাজং। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিরিশিরির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক কবি পরাগ রিছিল। সঞ্চালনা করেন কবি দোলন হাজং।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনে বিএনপি–মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মিজানুর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এম এ জিন্নাহ, সংস্কৃতিকর্মী আবদুল্লাহ আল মামুন, বিরিশিরির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য সন্ধ্যা রানী হাজং, জাতীয় হাজং সংগঠনের সভাপতি পল্টন হাজং, শ্যামনগর হাজং গ্রাম প্রতিনিধি সজল হাজং প্রমুখ।
আলোচনা শেষে শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন, পূজা–অর্চনা এবং রাতে ‘মহিষাসুর বধ’ পালার মাধ্যমে উৎসবের সমাপ্তি হয়।
কবি পরাগ রিছিল বলেন, ‘হাজংরা উৎসবমুখর জাতি। কিন্তু এই সম্প্রদায়ের অধিকাংশ উৎসব আজ বিলুপ্তির পথে। তাদের ধর্মীয় ও কৃষিভিত্তিক উৎসবগুলোর মধ্যে দেউলি উৎসব অন্যতম বর্ণিল আয়োজন। আত্মপরিচয়, সংস্কৃতিচর্চা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে যেন তারা আরও যত্নশীল হয় এবং সোনালি ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করতে পারে—এ লক্ষ্যেই আমাদের এই আয়োজন।’
কায়সার কামাল বলেন, ‘ভারতীয় ইতিহাসের প্রথম উপনিবেশবিরোধী গণবিদ্রোহ ও তৎপরবর্তী সব স্বাধিকার আন্দোলনে নেত্রকোনার আদিবাসী জনগোষ্ঠী অপরিসীম ত্যাগ ও বীরত্বের সাক্ষ্য রেখেছে। হাতিখেদাবিরোধী বিদ্রোহ, গারো বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ, পাগলপন্থী বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন, কৃষক-প্রজা আন্দোলনসহ নানা আন্দোলনে তাঁরা অকাতরে জীবন দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য।’