খরস্রোতা সুরিয়া নদীতে এখন হাঁটুসমান পানি

নদীটি দেখতে এখন অনেকটা নালার মতো। শুষ্ক মৌসুমে কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও শুধু কাদা থাকে।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সুরিয়া নদী এখন মৃতপ্রায়। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার নয়ানগর বাউশালী পাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চৈয়ারকান্দা গ্রামের বাসিন্দা ফকর উদ্দিন (৬০)। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুরিয়া নদী। ফকর উদ্দিন বলেন, তিনি ছোটবেলায় দেখেছেন, সুরিয়া নদীতে বড় বড় নৌকা চলত। ওই সব বড় নৌকায় করে ধান-পাট নিয়ে যাওয়া হতো। নদীতে ছিল দেশীয় জাতের মাছ। এখন নদী মরে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও শুধু কাদা থাকে।

গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ও অচিন্তপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুরিয়া নদী। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, এ উপজেলায় সুরিয়া নদী প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটি নেত্রকোনায় ঝিটাই নদ নামে পরিচিত।

গত বৃহস্পতিবার দেখা যায়, ধান খেতের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে সুরিয়া নদী। নদীটি দেখতে এখন অনেকটা নালার মতো। বোঝাই যায় না এটা একটা নদী।

চৈয়ারকান্দা গ্রামে সুরিয়া নদীর পাড়ে কথা হয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তাঁরা জানান, সুরিয়া নদীর দুই পাশে মানুষের বাড়িঘর আর ফসলের জমি। নদীর গভীরতা কমে গেছে। তাই বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টি হলেই সুরিয়া নদীর উপচে পানিতে মানুষের ফসলের জমি তলিয়ে যায়। এতে বর্ষাকালে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। নদীটি যখন গভীর ছিল, তখন এমন হতো না।

গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, ৩০ বছর ধরে একটু একটু কমে যাচ্ছে সুরিয়ার পানি। নদীর দুই পাড়ে একটু করে দখলও বাড়ছে। অথচ ৩০

বছর আগেও গৌরীপুর উপজেলার সুরিয়া নদীতে চলত বড় বড় নৌকা। সুরিয়ার নদীর পানিতে গৌরীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ধানের জমিতে সেচ দেওয়া হতো।

সুরিয়া নদীর দুরবস্থা বোঝাতে গিয়ে এলাকার লোকজন বলেন, নয়ানগর বাউশালীপাড়া গ্রামে সুরিয়া নদীর ওপর সেতু ছিল না বলে দুই পাড়ের মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছিল। ২০২০ সালের এলাকার লোকজন নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে নির্মাণ করে ১৭০ ফুট দীর্ঘ সরু একটি সেতু। বাউশালী পাড়ায় এখন পারাপারের জন্য ১৭০ ফুট দীর্ঘ সেতু হলেও ওই সেতুর নিচে নদীর প্রস্থ এখন বড়জোর ১০ ফুট। হাঁটুপানি থাকায় নদী এখন হেঁটেই পার হওয়া যায়।

সম্প্রতি গৌরীপুর উপজেলার নাগরিক সংগঠন এসো গৌরীপুর গড়ির উদ্যোগে বাউশালী পাড়া গ্রামে সুরিয়া নদী খননের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সুরিয়া নদী একসময় গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। তবে ক্রমে নদীর দুই পাড়ে প্রভাবশালীরা নদী দখল করে ফসলের খেত করেছেন।

এসো গৌরীপুর গড়ি সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী আবু কাউসার চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চাই সুরিয়া নদীটি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসুক। নদীটিকে আগের অবস্থায় ফেরানোর জন্য দখলমুক্ত করা এবং খনন করা জরুরি।

গৌরীপুরের ইউএনও ফৌজিয়া নাজনীন ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজা আফসানা। তিনি গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে বলেন, ইউএনও ছুটিতে থাকায় তিনি কোনো তথ্য দিতে পারবেন না। তবে তিনি স্মারকলিপিটি পেয়েছেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।