‘ক্ষতিপূরুণ চাইনে, ভাঙন থাকি হামারঘরোক বাঁচান’

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কানি চড়িতাবাড়ি গ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। সোমবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া ও তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। জেলার অনন্ত ২৩টি স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুর ১২টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা–সংলগ্ন কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার এবং করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। এদিকে একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের পানি ১৬৩ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি ৩৬ সেন্টিমিটার এবং করতোয়ার পানি ১৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

আরও পড়ুন

এদিকে জেলার অনন্ত ২৩টি স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে তিস্তার ভাঙনে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি, উত্তর শ্রীপুর, দত্তেরখামার, হরিপুর ইউনিয়নের কানি চড়িতাবাড়ি, চড়িতাবাড়ি, বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর, কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটি বুড়াইল, উজান বুড়াইল, কালাই সোতারচর, লালচামার, ব্রহ্মপুত্রের গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া, পাটদিয়া, খামার কামারজানি, খারজানি, মোল্লারচর ইউনিয়নের সিধাই, গোপালপুর, গিদারি ইউনিয়নের ডাঙ্গারঘাট, ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের জিগাবাড়ি, উড়িয়া ইউনিয়নের কাবিলপুর, সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের কালুরপাড়া, পাতিলবাড়ি, দীঘলকান্দি ও গাড়ামারা এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায় নদীভাঙা মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। কেউ উঠতি পাট কেটে নিচ্ছেন, কেউ গাছ কেটে নিচ্ছেন। অনেকে আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলছেন। সদরের কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি গ্রামের কৃষক চান মিয়া (৫৫) বলেন, ‘এব্যারক্যা কয় দিনের মদ্দে হামারঘরে বসতভিটা, এ্যাক বিগে পাটের খেত, এ্যাক বিগে আবাদি জমি নদীত চলি গ্যাচে। নদী হামারঘরে ম্যালা কিচু কারি নিচে। এ্যাকনা ঘর আচিলো, তাও কয় দিন আগোত নদীত চলি গ্যাচে। মানষের বাড়িত থাকপ্যার নাগচি। তাও হামরা কারও কাচে ক্ষতিপূরুণ চাইনে। ভাঙনের হাত থাকি হামারঘরোক বাঁচান। তাতে হামরা খুশি হমো।’

আরও পড়ুন
তিস্তার ভাঙনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামে ঝুঁকিতে। রোববার সকালে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

কামারজানি ইউনিয়ন–সংলগ্ন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামের কৃষক শফিউল মিয়া (৫০) বলেন, ‘এ্যাক বচর আগোত হামরা গেরেসতো আচিনো। হামারঘরে জমাজমি, বাড়িভিটা সগি আচিলো। নদী ভাঙি হামরাঘরে একন কিচুই নাই। কামলার কাম না করলে সোংসার চলে না। মানষের জাগাত এ্যাকনা ঘর তুলি আচি। তাও কোনো দিন যানি ভাঙি যায়। তকন কোনটে থাকমো চিনতাত আচি।’

একই গ্রামের আরেক কৃষক জাহিদুল ইসলাম (৬০) বলেন, সাত দিন ধরে ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাঁর এক বিঘা জমির উঠতি পাট ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখানে যেসব জায়গায় বালুর বস্তা ফেলানো হয়েছে, সেগুলো নদীতে ভেঙে যাচ্ছে।

সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, তাঁর এলাকায় প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পরিমাণ এলাকা ভাঙছে। সাত দিন থেকে গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়েছে।

গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক মুঠোফোনে বলেন, সবগুলো নদীর পানি হ্রাস পেয়েছে। তবে পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে সমীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। এই কাজ বাস্তবায়িত হলে এসব এলাকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।