জমি অধিগ্রহণেই আড়াই বছর

চার লেনের ২৭ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পের ধীরগতিতে বেড়েছে দুর্ভোগ।

শরীয়তপুর-পদ্মা সেতু সড়কের কাজ চলছে ধীরগতিতে। নড়িয়া উপজেলার নশাসন এলাকায় সম্প্রতি
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা সেতু-শরীয়তপুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদনের আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে পারেনি প্রশাসন। কাজ না আগানোয় খানাখন্দে ভরা সরু সড়ক দিয়ে ঝুঁকি ও দুর্ভোগ নিয়ে চলতে হচ্ছে। ঢাকা-শরীয়তপুরের পথে চলাচলকারী যাত্রীদের এই পথ পাড়ি দিতে দ্বিগুণ সময় লাগছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর নাওডোবা প্রান্ত (টোল প্লাজা) থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ৪ লেন সড়ক নির্মাণের জন্য ১০৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ২২টি এলএ কেসের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম করছে। আর সওজ ৩৪ ফুট প্রশস্ত করে ২ লেনের সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

যাত্রাবাড়ী থেকে রওনা দিয়ে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত আসতে ৪০ মিনিট লাগে। অথচ সেতু থেকে নামার পর শরীয়তপুরে আসতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা।
শাহ আলম সরদার, চালক, শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস 

জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ একটি জটিল কাজ। তাই অধিগ্রহণে একটু সময় লাগছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সওজকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত থাকলেও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। দুটি অংশে বিভক্ত করে দরপত্র আহ্বান করে সওজ। একটি অংশ শহর থেকে জাজিরা কলেজ পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার। আরেক অংশ জাজিরা কলেজ থেকে নাওডোবা পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক পর্যন্ত। গত ৪ জুন ১৩ কিলোমিটার অংশের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শালেহ আহম্মেদ। ওই অংশের ব্যয় ধরা হয় ১২৪ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে সড়কের আট কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে বালু ভরাট করছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ৩৯ কোটি টাকা বিল তুলে নিয়েছে। নাওডোবা অংশের কাজের দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে।

জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় কাজ করতে পারছেন না বলে দাবি করলেন শালেহ আহম্মেদের সমন্বয়ক মীর্জা শামীম আহম্মেদ। বিল তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যতটুকু ফাঁকা জায়গা পেয়েছি, তাতেই বালু ভরাটের কাজ করছি। যে পরিমাণ কাজ করেছি, তার বিপরীতে বিল উত্তোলন করেছি।’

শরীয়তপুর জেলার বাসিন্দারা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাতায়াতের জন্য সড়কটি ব্যবহার করছেন। বর্তমানে সড়কটির শহর থেকে কাজীরহাট পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার অংশ ১৮ ফুট চওড়া। আর কাজীরহাট থেকে নাওডোবা পর্যন্ত সাড়ে ৯ কিলোমিটার অংশ ১২ ফুট চওড়া, যার অধিকাংশই খানাখন্দে ভরা। ঢাকা-শরীয়তপুরের যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে এ পথে চলাচল করছেন।

সম্প্রতি শরীয়তপুর শহর থেকে জাজিরা পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা সেতু-শরীয়তপুর সংযোগ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে দুটি ট্রাক দিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে। সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এই অংশে মাত্র ৪ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে, তাঁরা বালু ভরাটের কাজ করছেন।

জেলা পরিবহন মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে ২৫০টি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে। পাশাপাশি অসংখ্য ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে। 

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, জমি অধিগ্রহণ করতে দেরি হচ্ছে। আর একটি অংশের কাজ চলছে। ওই অংশের ঠিকাদার বালু ভরাট করে কিছু বিল নিয়েছে। আর বাকি সাড়ে ১৩ কিলোমিটারের দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে। শিগগিরই কার্যাদেশ দেওয়া হবে।

শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের চালক শাহ আলম সরদার বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে রওনা দিয়ে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত আসতে ৪০ মিনিট লাগে। অথচ সেতু থেকে নামার পর শরীয়তপুরে আসতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। রাস্তা ভাঙা ও সরু হওয়ায় চলতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। এখন প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।