‘ব্যবসার উদ্দেশ্যে’ গাছের কথা বলার গুজব ছড়ানো হয়

গাছ কথা বলছে—এমন গুজব শুনে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের গজিনা গ্রামে এসেছেন এই ব্যক্তিরা। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকেছবি: প্রথম আলো

গাছ কথা বলছে—এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক মানুষ দূরদুরান্ত থেকে আসছেন। গাছে কান লাগিয়ে কথা শোনার চেষ্টা করছেন; কিন্তু কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না। ব্যর্থ হয়ে ফিরে কেউ কেউ গালাগালও দিচ্ছেন। এমন কাণ্ড ঘটেছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের গজিনা গ্রামে।

গাছের কথা শুনতে গজিনা গ্রামে আসা অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের কেউই কথা শুনতে পাননি বলে জানিয়েছেন। ব্যবসা করার উদ্দেশ্যেই এই গুজব ছড়ানো হয়েছে বলে মনে করেন মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

গুজবের উৎস সম্পর্কে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, গজিনা গ্রামের আলতাফ শেখের ছেলে সৌদিপ্রবাসী সবুর শেখের ঘরের পাশের গাছের নিচে ১৪ জুন কয়েকটি শিশু খেলছিল। এ সময় একটি শিশু গাছে আঘাত করলে গাছটি ‘কথা বলে ওঠে’। শিশুরা বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের কাছে জানালে তাঁরা এসে গাছে কান পেতে ভেতর থেকে আওয়াজ শুনতে পান বলে দাবি করেন।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের টেকেরহাট থেকে পশ্চিম দিকে আড়াই কিলোমিটার গেলেই গজিনা গ্রাম। আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের পাকা সড়ক থেকে ১০ মিনিট হাঁটার পর আলতাফ শেখের বাড়ি। বাড়ির পাশে আনুমানিক ১০-১২টি লম্বা গাছ রয়েছে। সেখানে ২৫-৩০ জন লোক ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ গাছের সঙ্গে কান পেতে কথা শোনার চেষ্টা করছিলেন। কেউ কেউ দূরে দাঁড়িয়ে বিষয়টি দেখছিলেন।

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা থেকে আসা আসলাম মাতুব্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গতকাল জানতে পেরেছি, গাছে কথা বলে। তাই সকালে এসেছি গাছের কথা শুনতে; কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমি বারবার গাছে কান পেতে কথা শুনতে পারলাম না। আমার মনে হয়, এটা একটা গুজব। এই গুজব ছড়িয়ে কোনো না কোনো ব্যক্তি অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিল।’

গজিনা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি মনে করেন, এটি গুজব ছাড়া কিছুই না। ইতিমধ্যে অনেকে গাছের নিচে এসে টাকা, চাল, মুরগি দেওয়া শুরু করেছিল। পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে এসে গাছের পাশে দেওয়া বেড়া ভেঙে দিয়েছে।

গজিনা গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ মোল্লা (৪০) বলেন, গাছ কথা বলে এটা জানতে পেরে তিনি তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছিলেন। এরপর গাছের চারপাশ দিয়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে দিয়েছিলেন। সেটি পুলিশ ভেঙে দিয়েছে। গাছের কথা বলার শব্দ তিনি মুঠোফোনে রেকর্ড করেছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি আর কথা বলতে চাননি।

গাছের কথা বলার গুজব ছড়ানোর পর শত শত মানুষ দূরদূরান্ত থেকে আসছেন। গাছের সঙ্গে কান লাগিয়ে কথা শোনার চেষ্টা করছেন তাঁরা। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের গজিনা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

গাছের মালিক আলতাফ শেখ দাবি করেন, ‘১৪ জুন থেকে আমরা গাছে কান পেতে কথা শুনেছি।’ কী কথা শুনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গাছে কান পেতে সালাম (আসসালামু আলাইকুম) দিলে শুধু মেয়ে কণ্ঠে “হু” বলেছে। এরপর গতকাল থেকে আর কথা বলে না।’ এই বক্তব্যের বাইরে গাছের কথা বলার সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মো. রাশেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গাছের প্রাণ আছে, গাছের অনুভূতি আছে এটা বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত। তবে গাছ কথা বলে এটা শতভাগ গুজব। পৃথিবীতে এমন কোনো নজির এখন পর্যন্ত নেই যে গাছে কথা বলেছে। তাই এটি গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়।

গাছের কথা নিজের কানে শুনেছেন এমন একজনকেও খুঁজে পাননি বলে জানিয়েছেন মুকসুদপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাছ কথা বলে—একটা মহল এ গুজব ছড়িয়েছে। গাছের চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে এটিকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করতে চেয়েছিল তাঁরা। আমরা সে বেড়া ভেঙে দিয়েছি।’