এবার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিলেন বাবর আলী, জানেন, কী সেই চ্যালেঞ্জ

চট্টগ্রামের পর্বতারোহী বাবর আলী মাউন্ট ইউনামের শীর্ষেছবি: সংগৃহীত

খুব বেশি আগের কথা নয়। গত বছরের ১৩ এপ্রিল কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে সাইকেলযাত্রা শুরু করেছিলেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী বাবর আলী। এক মাসের চেষ্টায় প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারি গিয়ে থেমেছিলেন তিনি। পথে যেতে যেতে ১৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। এর আগে ২০১৯ সালে পরিবেশ রক্ষার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা হেঁটে পার করেন তিনি। হেঁটে বাংলাদেশ ও সাইকেলে ভারতবর্ষ পাড়ি দেওয়া বাবর আলী এবার নতুন গল্প লেখার অপেক্ষায়। আরও বড় দুটি চ্যালেঞ্জ নিলেন তিনি।

কী সেই চ্যালেঞ্জ, তা জানার আগে, চলুন এই ভ্রমণপিপাসুর নানা অর্জনে চোখ রাখা যাক। হাল আমলে ‘ট্রেকিং’ শব্দটি অনেকের পরিচিত। সেই ট্রেকিং জগতে বাবর আলীর হাতেখড়ি হয় ২০১০ সালে। ওই বছর পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন দুর্গম পাহাড় চষে বেড়ান তিনি। সফলতার সঙ্গে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার পর তাঁর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। কীভাবে বিশ্বের বড় বড় পর্বতে উঠবেন, সেই পরিকল্পনা চলতে থাকে মস্তিষ্কে। এরপর গত এক দশকে হিমালয়ের নানা পর্বত জয় করেছেন পেশায় চিকিৎসক বাবর আলী। এর মধ্যে ২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম চূড়া আমা দাবলাম (২২ হাজার ৩৪৯ ফুট) আরোহণ করেন বাবর।

এবার নতুন চ্যালেঞ্জ তাহলে কী? সে কথাই জানালেন চট্টগ্রামের এই তরুণ। বললেন, ‘বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে যাওয়া অনেকের স্বপ্ন। প্রতিবছর হাজারো পর্বতারোহী এভারেস্টের পথে হাঁটেন। কিন্তু এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পর একই সঙ্গে আরেক পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে ওঠার চেষ্টা বাংলাদেশ থেকে আগে হয়নি। আমি সেই চ্যালেঞ্জটাই নিলাম। অর্থাৎ একই অভিযানে মাউন্ট এভারেস্ট ও চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসের চূড়ায় উঠব।’

সাইকেলে ভারতে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাড়ি দেওয়ার সময় বাবর আলী
ছবি: সংগৃহীত

আজ শনিবার বেলা ১১টায় বাবর আলীর ‘হিমালয়-যাত্রা’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে হিমালয় অভিযানের উদ্যোক্তা সংগঠন পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’। বাবর আলীর এই অভিযানে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস, ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যারসসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন বাবর আলী। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানা সরঞ্জাম কেনার কাজ শেষ করে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে লুকলার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন তিনি। সপ্তাহ খানেকের ট্রেকিং শেষ পৌঁছাবেন এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে। মূল অভিযান শুরু হবে এখান থেকেই। দুটি পর্বতের চূড়ায় উঠতে লাগবে দুই মাসের মতো।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন অভিযানের সমন্বয়ক ফরহান জামান। আরও বক্তব্য দেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সাবেক সভাপতি শিহাব উদ্দীন, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নূর ফয়সাল। সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে বাবরের হাতে তুলে দেওয়া হয় জাতীয় পতাকা।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একই অভিযানে এভারেস্ট ও লোৎসে সামিটে যাচ্ছেন বাবর আলী। এ সময় তাঁর হাতে দেশের পতাকা তুলে দেওয়া হয়। আজ সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে
ছবি: সংগৃহীত

পেশায় চিকিৎসক, নেশায় পর্বতারোহণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন ৩৩ বছর বয়সী বাবর আলী। এরপর শুরু করেছিলেন চিকিৎসা পেশা। তবে থিতু হননি। চাকরি ছেড়ে দেশ-বিদেশ ঘোরার কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। সাইকেলিংয়ের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত সারগো রি (৪ হাজার ৯৮৪ মিটার), সুরিয়া পিক (৫ হাজার ১৪৫ মি.), মাউন্ট ইয়ানাম (৬ হাজার ১১৬ মি.), মাউন্ট ফাবরাং (৬ হাজার ১৭২ মি.), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নিলডা (৬ হাজার ৩০৩ মি.), মাউন্ট শিবা (৬ হাজার ১৪২ মি.), মাউন্ট রামজাক (৬ হাজার ৩১৮ মি.), মাউন্ট আমা দাবলাম (৬ হাজার ৮১২ মি.) ও চুলু ইস্ট (৬ হাজার ০৫৯ মি.) পর্বতের চূড়ায় উঠেছেন এই তরুণ।