মাথায় পানি জমেছে শিশু সাইমুনের, অস্ত্রোপচারের টাকার জন্য দিশাহারা দিনমজুর বাবা

মা–বাবার কোলে শিশু সাইমুন। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভাটবাড়িয়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

জন্মের পর থেকে শরীরের তুলনায় মাথার আকার বড় শিশু সাইমুনের। শিশুটি এখনো হাটতে বা বসে থাকতে পারে না। মা-বাবার কোল ও বিছানায় শুয়ে সময় কাটে তার। চিকিৎসকেরা বলেছেন, মাথায় পানি জমার কারণে (হাইড্রোকেফালাস) এমনটা হয়েছে। অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করালে ঠিক হয়ে যাবে। এতে খরচ হবে দুই লাখ টাকা। কিন্তু দিনমজুর বাবা আরেক আলী মণ্ডল টাকা জোগাড় করতে পারছেন না। দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে।

শিশু সাইমুন ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার ভাটবাড়িয়া গ্রামের আরেক আলী মণ্ডল ও আফরোজা খাতুন দম্পতির সন্তান। তাঁদের তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সাইমুন, বয়স এক বছর চার মাস।

ভাটবাড়িয়া গ্রামে আরেক আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাটকাঠির বেড়ার দুটি কক্ষ, ওপরে টিনের ছাউনি। বারান্দায় একটি খাটের ওপর শিশু সাইমুন শুয়ে আছে। উঠানে অন্য শিশুরা খেলা করছে, যা সাইমুন চেয়ে চেয়ে দেখছে। অথচ তারও ওই শিশুদের সঙ্গেই থাকার কথা ছিল, কিন্তু পড়ে আছে বিছানায়।

আরেক আলী মণ্ডল জানান, ভিটেবাড়িতে মাত্র পাঁচ শতক জমি ছাড়া কিছুই নেই তাঁর। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী আর তিন সন্তানকে নিয়ে অভাবের সংসার চলছিল। সেই ঘোড়ার গাড়িও এখন নেই। ছেলের চিকিৎসায় বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এখন অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। যা পান তাই দিয়ে সংসার চলে। ছেলের অস্ত্রোপচারের টাকা জোগাড় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।

সাইমুনের জন্মের আড়াই মাস পর আরেক আলী মণ্ডল লক্ষ করেন ছেলের মাথাটা বড় হচ্ছে। তখন স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান, কিন্তু কোনো কাজ হয় না। পরবর্তীকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান, মাথায় পানি জমেছে।

আরেক আলী জানান, অপারেশন করে পানি বের করার জন্য খরচ হবে দুই লাখ টাকা। সবশেষ তিন মাস হলো ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যান, সেখানেও চিকিৎসক একই কথা বলেছেন। এই টাকা জোগাড় করতে না পেরে ছেলেকে বাড়ি ফেরত এনেছেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ছেলের পেছনে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। এখন তাঁর নিকট আত্মীয়স্বজনের দেওয়া ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আছে। বাকি টাকা জোগাড় করতে পারছেন না। তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।

সাইমুনের মা আফরোজা খাতুন বলেন, ‘ছেলেটাকে নিয়ে খুবই অসহায় জীবন যাপন করছি। ছেলের বয়স যখন দেড় থেকে দুই মাস তখন থেকেই অসুস্থ। শিশুটির কষ্ট দেখে সারাক্ষণ চোখে পানি এসে যায়। তাই সবার কাছে আকুতি, শিশুটিকে বাঁচান।’
প্রতিবেশী জামাল উদ্দীন বলেছেন, আরেক আলী ছোট ছেলেকে নিয়ে অসহায় দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামের মানুষ যতটুকু সম্ভব সাহায্য করেছেন। এখন অস্ত্রোপচারের জন্য আরও টাকা প্রয়োজন।

স্থানীয় সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহামুদুল হাসান বলেছেন, শিশু সাইমুনের কথা শুনেছেন। আরেক আলী খুব গরিব মানুষ। তাঁর সন্তানের চিকিৎসার জন্য যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করবেন। তিনি আশা করছেন, সমাজের বিত্তবান কেউ শিশুটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন।