কুমিল্লার পথে পথে আগুনরঙা কৃষ্ণচূড়া

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ফুটেছে লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়াছবি: প্রথম আলো

সবুজ গাছগাছালির মধ্যে আগুনরঙা কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিতে এনেছে ভিন্ন আমেজ। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে বৈশাখের আকাশে কৃষ্ণচূড়া তার রূপ মেলে ধরেছে। নিসর্গপ্রেমীরা এই ফুলের রূপ দেখে মুগ্ধ। কুমিল্লায় সবুজ গাছের ফাঁকে পথে–প্রান্তরে, সড়কের ধারে, উদ্যানে, অফিস, বাসাবাড়ির ভেতরে কৃষ্ণচূড়াগাছের ডালে ডালে ফুটে আছে ফুল। শত শত গাছে ফোটা কৃষ্ণচূড়া পথিকের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিচ্ছে।

কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের ওয়ার সিমেট্রির (রণ সমাধিক্ষেত্র) ভেতরের অন্তত সাতটি গাছে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। বুড়িচং উপজেলার কংশনগর বাজার, জাফরগঞ্জ বাজার, দেবীদ্বার নিউমার্কেট এলাকায়ও কৃষ্ণচূড়া দেখা গেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গাছেও ফুল ফুটেছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের দপ্তরের গা ঘেঁষেও সৌন্দর্য বর্ধন করেছে এই ফুল। ছোট গাছে অসংখ্য ফুল। জেলা পরিষদ ভবনের সামনেও ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। নগর উদ্যান, পুলিশ সুপারের বাংলো ও প্রেসক্লাব এলাকা ঘিরেও কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটে আছে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা বলেন, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস মাদাগাসকার দ্বীপে। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে এটি ‘গুলমোহর’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সর্বত্র এ গাছ আছে। কৃষ্ণচূড়া মধ্যম আকৃতির পত্র ঝরা বৃক্ষ। বীজ থেকে এর চারা হয়। শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম delonix regia। এটি সেভিসি (Sabaceae) গোত্রের উদ্ভিদ। প্রজাতিভেদে ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। দেখা যায়, অনেক বড় গাছে ফুল ফোটে না। আবার ছোট গাছে ফুল ফোটে। শীর্ষ মঞ্জরিতে ফুল হয়। এপ্রিল থেকে জুলাই মাসজুড়ে ওই ফুল শোভা বর্ধন করে। বসন্তে শুরু, বর্ষায় শেষ এই ফুলের সৌন্দর্য।

কুমিল্লার হাফিজ আহমেদ উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক রুবাইয়া সুলতানা বলেন, গ্রীষ্মের এই সময়ে কৃষ্ণচূড়া ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তপ্ত রোদে আগুনের মতো জ্বলে থাকে এই ফুল। সবুজের মধ্যে উজ্জ্বল লাল এই ফুল। উষ্ণ আবহাওয়ায় এই ফুল হয়। দৃষ্টিনন্দন এই ফুল মনকে উত্ফুল্ল করে। আজকাল পোশাকেও কৃষ্ণচূড়া তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশে লাল কৃষ্ণচূড়া হয়। তবে আজকাল ছাদবাগানে কেউ কেউ হলুদ কৃষ্ণচূড়ার গাছও লাগান। এগুলো অবশ্য ছোট আকৃতির।

গান–কবিতায় ঘুরেফিরে এসেছে কৃষ্ণচূড়ার কথা। কবি নির্মলেন্দু গুণ ‘কৃষ্ণচূড়ার প্রতি রাধার উক্তি’ কবিতায় বলেছেন, ‘সবাই যখন ঝরে গেছে, ঝরে যাচ্ছে, তখন তোমার ফোটার সময় হলো, কৃষ্ণচূড়া...হে কৃষ্ণের প্রিয় লাল ফুল, শ্রীরাধার কাছে কী চাও তুমি বলো।’ ‘কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে, তুমি আসবে বলে’–এর মতো জনপ্রিয় গানও আছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কৃষ্ণচূড়া নিয়ে লিখেছেন, ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে, আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে...।’

বৃক্ষপ্রেমী জামিল খান বলেন, একসময় কুমিল্লা শহরে ও লালমাই পাহাড়ে প্রচুর কৃষ্ণচূড়াগাছ দেখা যেত। সময়ের বিবর্তনে ওই গাছ কমে গেছে। এই গাছ যেমন ছায়া দেয়, তেমনি এর ফুল মানুষকে আকৃষ্ট করে। এই ফুলের ওপর পাখি এসে বসে। কিচিরমিচির করে। আর বেশি করে কৃষ্ণচূড়াগাছ লাগানো উচিত।